তাহিরপুরে বোরো ফসল রক্ষা বাঁধে ধস, ফসল হানির আশঙ্কা

50
তাহিরপুরের মাটিয়ান হাওর ধেবে যাওয়া বাঁধ পঙ্খির খাল (আনন্দ নগর)।

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
তাহিরপুরে পাহাড়ি ঢলে নদ নদীতে পানি বৃদ্ধি। বিভিন্ন হাওরের একাধিক বোরো ফসল রক্ষা বাঁধে ধস। ২০১৭ সালের মত আগাম বন্যায় বোরো ফসল হানির শঙ্কা হাওর পারের কৃষকদের।
শনিবার সকালে টাঙ্গুয়া হাওরের নজর খালি বাঁধ ভেঙ্গে বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর ঐ দিন রাতেই ফাটল দেখা দেয় মাটিয়ান হাওর আনন্দ নগর পংখির খাল বোরো ফসল রক্ষা বাঁধে। সে খবর শনিবার রাত ১২ টার দিকে হাওর পারের বিভিন্ন গ্রামের মসজিদে মাইকিং করে জানিয়ে দেয়া হয়। খবর পেয়ে রাতেই আগুল, কোদাল নিয়ে কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধে মাটি কাটতে যান। সেই সাথে রাতেই ধেবে যাওয়া বাঁধে উপস্থিত হন তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রায়হান কবির সহ উপজেলা প্রশসনের লোকজন।
রবিবার সকালে মাটিয়ান হাওর আনন্দনগর পঙ্খির খাল ধেবে যাওয়া বাধে উপস্থিত হন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক। তিনি ধেবে যাওয়া বাঁধ সহ উপজেলার বিভিন্ন হাওরের একাধিক বাঁধ ঘুরে দেখেন। সে সময় হাওর পারের একাধিক গ্রামের কৃষকরা জেলা প্রশাসক কে জানান, যথা বাঁধের মাটির কাজ না করা, মাটি ধুরমোজ না করা এবং গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ গুলোতে বাঁশ বস্তা না দেয়ার কারেণ সামান্য বৃষ্টিতে বাঁধের মাটি ধসে পড়ছে। আর এক এক করে হুমকিতে পড়ছে মাটিয়ান, শনি, ফানা সহ সবক’টি হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ।
শুধু মাটিয়ান হাওর আনন্দ নগর পঙ্খির খাল বাঁধ নয়। একই অবস্থায় রয়েছে মাটিয়ান হাওরের বোয়াল মারা ক্লোজার, কাউকান্দি আলমখালি, বড়দল মেশিন বাড়ি, ঠাকাঠুকিয়া কেন্দুয়া নদীর মুখ, শনির হাওরের নান্টুখালি, সাহেব নগর বাঁধ। উল্লেখিত বাঁধ গুলোর কোনটির মধ্যে নাম মাত্র বাঁশ বস্তা দেয়া আছে, কোনটিতে মাটি ছাড়া কোন কিছুই নেই। এ অবস্থায় একদিকে পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে আর অন্য দিকে বাঁধ গুলো হুমকিতে পড়ছে।
মাটিয়ান হাওর ৪৪নং প্রকল্প আনন্দ নগর পঙ্খির কাল বাঁধ এর প্রকল্প সভাপতি ঝিলিম মিয়া বলেন, বাঁধে শুধু মাত্র মাটির কাজ ধরা। তার পরেও আমি নিজ উদ্যোগে বাঁধে বাঁশ কোটা দিয়েছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড উপ-সহকারী কর্মকর্তা তাহিরপুর দাযিত্বপ্রাপ্ত আসাদুজ্জামন বলেন, বাঁধটিতে শুধু মাটির কাজ ধরা রয়েছে। তিনি আরও জানান, বাঁধের ভেতরে মাটিয়ান হাওরে দিকে একটি গর্ত রয়েছে, স্থানীয় লোকজন গর্তের পানি শুকিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যায়। ফলে গর্তটি পানি শূন্য হয়ে পরে। এখন নদীতে পানি আসছে আর ভেতরে পানি না থাকায় বাঁধটির উপর বেশি চাপ পরছে।
রতনশ্রী গ্রামের মাটিয়ান হাওর পারের কৃষক ইকবাল হোসেন বলেন, হাওরের সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ বাঁধে বাঁশ বস্তা দিয়ে বাঁধ না দিলে যে কোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে ২০১৭ সালের ফসল হানি হতে পারে।
তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জুনাব আলী বলেন, আননন্দ নগর পঙ্খির খাল বাঁধে যে ভাবে ফাটল দেখা দিয়েছে যদি শনিবার রাতে বৃষ্টি হত তাহলে বাঁধ ঠেকানো কষ্টকর হতো।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রায়হান কবির বলেন, রাত থেকে এখন পর্যন্ত হাওরেই আছি। বর্তমানে লোকজন ধেবে যাওয়া বাঁধে কাজ করছেন। জরুরী ভিত্তিতে বাঁশ বস্তা দেয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, হাওরের বাঁধ গুলোর বর্তমান অবস্থা দেখতে আমি হাওরে অবস্থান করছি। যে বাঁধগুলো দুর্বল রয়েছে বা বৃষ্টিতে ধেবে গেছে সে বাঁধগুলোর পিআইসিদের বলেছি দ্রুত বাঁশ বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষা করতে। যারা না করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবেও বলে তিনি জানান।