জরুরী অবস্থার পর কলম্বোয় কড়া নিরাপত্তা

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
জরুরী অবস্থা জারির পর শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর সড়কে টহল শুরু করেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। শনিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে কলম্বোয় ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট। নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সঙ্কটে মানুষের ক্ষোভ বাড়তে থাকায় দেশটিতে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়।
শুক্রবার রাতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। এর ফলে ওয়ারেন্ট ছাড়া সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার ও আটক করতে পারবে সেনাবাহিনী। প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও সেবা বজায় রাখতে জরুরী অবস্থার প্রয়োজন। জ্বালানি এবং অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রির অপ্রতুলতায় ক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। ওই ঘটনার পর ৫৩ জনকে গ্রেফতারের পর কলম্বো এবং আশপাশের এলাকায় কার্ফু জারি করা হয়।
জরুরী অবস্থা ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায় শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চাং বলেন, ‘শ্রীলঙ্কানদের শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদের অধিকার রয়েছে-গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশের জন্য তা প্রয়োজনীয়।’ এক টুইট বার্তায় তিনি লেখেন, ‘আমি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে দেখছি, আশা করছি সামনের দিনগুলোতে সব পক্ষ আরও র্ধৈর্যধারণ করবে পাশাপাশি অতি প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অভাবগ্রস্তদের স্বস্তি ফিরে আসবে।’ বৈদেশিক রিজার্ভ বাঁচাতে জ্বালানি আমদানি কমিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বিদ্যুত উৎপাদন কমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় প্রতিদিন ১৩ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।
এদিকে নয়াদিল্লীর কাছ থেকে কলম্বোর ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত হওয়ার পর শ্রীলঙ্কায় দ্রুত ৪০ হাজার টন চালের একটি চালান পাঠাতে কাজ শুরু করেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত দুই কর্মকর্তা শনিবার রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছেন। ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশ শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশটির কাছে আমদানিকৃত পণ্যের দাম পরিশোধ করার মতো পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা নেই। পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদেরকে এখন বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর কাছে হাত পাততে হচ্ছে। ভারতের পাঠানো এ চালের চালান এপ্রিলের মাঝামাঝি হতে যাওয়া নববর্ষ উৎসবের আগেই শ্রীলঙ্কায় পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধের চরম ঘাটতি মোকাবেলায় সহায়তা করতে বিশ্বের বৃহত্তম চাল রফতানিকারক দেশ ভারত গত মাসে শ্রীলঙ্কাকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিতে সম্মত হয়। ৪০ হাজার টন চাল পৌঁছালে শ্রীলঙ্কায় চালের দাম কমে আসবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ‘দক্ষিণের বন্দরগুলোতে চাল বোঝাই শুরু হয়েছে। দ্রুত পাঠাতে প্রথমে আমরা কন্টেইনারে চাল বোঝাই করছি, নৌযানে সেগুলো তোলাও কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হবে,’ বলেছেন ভারতের ঋণচুক্তির আওতায় শ্রীলঙ্কা স্টেট ট্রেডিং (জেনারেল) কোম্পানিকে চাল সরবরাহের কাজ পাওয়া পাতাভি এ্যাগ্রো ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিভি কৃষ্ণা রাও। কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র এ অর্থনৈতিক সঙ্কটের ফলে দেখা দেয়া সহিংস বিক্ষোভের পর শুক্রবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশজুড়ে জরুরী অবস্থা জারি করেন। শ্রীলঙ্কায় এপ্রিলের মাঝামাঝি নববর্ষ উৎসবের সময় চালের চাহিদা ব্যাপক থাকে, তার আগেই দেশটিতে ভারতীয় চালের এই চালান পৌঁছাবে বলে জানান মুম্বাইভিত্তিক এক ডিলার। ‘এই মুহূর্তে কেবল ভারতই দ্রুত চাল পাঠাতে পারবে। অন্য দেশগুলোর যেখানে লাগবে কয়েক সপ্তাহ, সেখানে ভারত পাঠাতে পারবে কয়েকদিনের মধ্যেই,’ বলেছেন তিনি। শ্রীলঙ্কায় কয়েক মাসের মধ্যে ৩ লাখ টন চাল পাঠানোর কথা ভারতের, তারই অংশ হিসেবে এ ৪০ হাজার টন যাচ্ছে, বলেছেন বিভি কৃষ্ণা রাও। আসছে সপ্তাহগুলোতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা শ্রীলঙ্কায় চিনি, গমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় আরও অনেক পণ্যই পাঠানো শুরু করতে যাচ্ছে, জানিয়েছেন মুম্বাইভিত্তিক ওই ডিলার।