খুঁজে নিতে হবে সুখের ঠিকানা

2

সুখ কি? প্রকৃতপক্ষে সুখের সুনির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা নেই। সুখ একটি আপেক্ষিক বিষয়। কেউ অল্পতেই সুখী। কেউ অনেক কিছু পেয়েও সুখী নয় আদৌ। তার আরও বেশি চাই। সমাজতত্ত্ববিদ ও মনোবিজ্ঞানীরা সুখের সংজ্ঞা খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন। ধর্মবেত্তারা অবশ্য অল্পতেই সুখের ঠিকানা খুঁজে নিতে উপদেশ দিয়েছেন মানুষকে। আবার কবি হা-হুতাস করে বলেছেন, হেথা নয় অন্য কোথা অন্য কোনখানে যাও সুখের সন্ধানে। আসলে সুখ নিহিত রয়েছে মানুষের মধ্যেই- শরীরে ও মনে। কথায় বলে সুস্থ দেহে, সুস্থ মন। শরীর ভাল থাকলে মন ভাল থাকে। আবার বিপরীতে মন ভাল তো শরীর ভাল। সেখানে বাসা বাঁধতে পারে না কোন অসুখ-বিসুখ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জাতিসংঘ ২০১২ সালে ২০ মার্চকে আন্তর্জাতিক সুখী দিবস ঘোষণা করে, যা অতিবাহিত হয়েছে। সেই থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালন করছে বিশ্বের ১৯৩টি দেশ। আন্তর্জাতিক সুখী দিবসের ধারণা প্রথম দেন বিশ্বের অন্যতম ফিলানথ্রপিস্ট বা মানবহিতৈষী জাতিসংঘের বিশেষ উপদেষ্টা জায়মি ইলিয়েন, মহামতি মাদার তেরেসার হাত ধরে যার বিশ্ব দর্শন। চলতি বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘কিপ কাম, স্টে ওয়াইজ এ্যান্ড বি কাইন্ড- অর্থাৎ, নিজেকে শান্ত ও স্থির রাখ, বিচক্ষণ, জ্ঞানী ও হৃদয়বান হও। সুসংবাদ হলো জাতিসংঘ প্রকাশিত বিশ্বের ১৪৩টি সুখীর দেশের তালিকায় এবার বাংলাদেশের অবস্থান ৭ ধাপ এগিয়ে হয়েছে ৯৪তম। গত তিন বছরে সুখের তালিকায় ৩১ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। তদুপরি প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে কয়েক ধাপ। তালিকার শীর্ষে রয়েছে ফিনল্যান্ড আর সবার শেষে আফগানিস্তান।
গত দুই বছর ধরে চলমান করোনা মহামারীর এই ক্রান্তিকালেও বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, যা ইতিবাচক। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২ বছর ৮ মাস। ইতোপূর্বে তা ছিল ৭২ বছর ৬ মাস। করোনা মহামারীর ভয়ঙ্কর ছোবলও তেমন কাবু করতে পারেনি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে। এর কারণ অবশ্যই সরকারের সময়োচিত যথাযথ পদক্ষেপ, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দান, গরিব ও দরিদ্র মানুষের জন্য নগদ অর্থসহ ত্রাণ সহায়তা, সর্বোপরি বিভিন্ন সময়ে প্রদেয় বিবিধ প্রণোদনা প্যাকেজ। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে, দ্রব্যমূল্য থেকেছে নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বমন্দার প্রেক্ষাপটে আগামীতেও ইতিবাচক অগ্রগতির পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি। গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে ডাবল ডিজিট জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন করা অসম্ভব হবে না। সর্বোপরি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ স্বল্পতেই সুখী, এ কথা বলা যায় নির্দ্বিধায়।