নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। যে কোন মূল্যে বাজারদর নিয়ন্ত্রণসহ সাধারণ মানুষের নাগালে রাখার জন্য মাঠে নামছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানো এবং অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে নিয়মিত তদারকি। ১৩৫ জনের একটি তালিকা হাতে নিয়ে নজরদারি বাড়িয়েছে র্যাব, ঢাকা মহানগর পুলিশসহ আরও দুটি গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের গতিবিধি নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কয়েকটি বড় ভোজ্যতেল কারখানা ও দোকান পরিদর্শনসহ তাৎক্ষণিক জরিমানা এবং অনিয়মের অভিযোগে বিক্রয়কেন্দ্রগুলো সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অনুরূপ চলেছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ- বন্দরসহ দেশের অন্যান্য স্থানেও। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি- রফতানির পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যবসায়ী ও আমদানিকারদের দাবির মুখে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলার উপর থেকে। চালের বাজারে চলমান রয়েছে নিত্য অভিযান। নির্দেশ দেয়া হয়েছে মিলে পলিশ করে মিনিকেট- নাজিরশাইল নামে উচ্চমূল্যে চাল বাজারজাত করা যাবে না। দৃশ্যমান তদারকি ও দেখভালে নিত্যপণ্যের বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বাড়ানো হচ্ছে টিসিবির কার্যক্রম। সব মিলিয়ে আসন্ন রমজানে সরকার নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আন্তরিক ও তৎপর।
নিত্যপণ্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের দিশাহারা হওয়ার উপক্রম। জিনিসপত্রের দাম এখন আর নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের মধ্যে নয়, এমনকি নাগালের বাইরে চলে গেছে মধ্যবিত্তদেরও। রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গম ও ভুট্টার দাম। ভোজ্যতেল, ডাল ও চিনির দাম। আসন্ন রমজানে ছোলা, পেঁয়াজ, বেগুন- শসা ও ফলের দামও বাড়বে। উচ্চবিত্তদের বাদ দিলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ এ সময় যাবে কোথায়? বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বলছে, করোনার কারণে গত বছর বেকার হয়ে পড়েছে ২৬ লাখের বেশি মানুষ। অনেকেই বাধ্য হয়ে চলে গেছে গ্রামে।
চাল-ডাল-চিনি ভোজ্যতেলসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক স্থিতিশীল ও সহনশীল রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ জনসাধারণকে প্রত্যাশিত সেবা দিতে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রমজানে যাতে নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ে সে জন্য যথাযথ উদ্যোগ নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও ট্যারিফ কমিশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ এবং পরামর্শ দেয়া হয়েছে। রোজার মাসে পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। কিছু অসৎ ব্যবসায়ী ও মজুদদার সুযোগ নিয়ে থাকেন, এ সময়ে যা কাম্য নয় কোন অবস্থাতেই। বাণিজ্য সচিব বলেছেন, রমজানের সময় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না। সরকার বাজার ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। সাধারণ মানুষের নিত্যজীবন সহনীয় করে তুলতে সরকার তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে নিশ্চয়ই। তবে শুধু রমজান নয়, সারা বছর যেন নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল থাকে।