দেশ, রাষ্ট্র, সমাজসহ পরিবারে যদি পিছিয়ে থাকে নারী জাতি, তাহলে গোটা সমাজ ব্যবস্থার ওপরই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নারীকে সমঅধিকারসম্পন্ন মানুষ হিসেবে বিবেচনা না করার প্রবণতা সমাজ ও দেশকে পেছন দিকেই টেনে নেয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানোই সভ্যতা ও সংস্কৃতির দায়। একই সঙ্গে রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজেরও।
আজ ৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত কর্মজীবী নারীদের বিশ্ব সম্মেলনে প্রতিবছর দিনটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কোপেনহেগেন ঘোষণার ৭৫ বছর পর জাতিসংঘ দিবসটির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় প্রতিবছর। দিবসটি নারীকে সচেতন করে তোলার কাজটি সুচারুভাবে করছে। নারীকে বাদ দিয়ে একটি সুষম সমাজের কথা চিন্তাও করা যায় না। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমঅধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজই হচ্ছে একটি আদর্শ সমাজ ব্যবস্থা। যদি সমাজে নারীরা পিছিয়ে থাকে, তাহলে গোটা সমাজ ব্যবস্থার ওপরই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কবি বলেছেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’
নারী-পুরুষ নিজ নিজ অবস্থানে সমুজ্জ্বল। পরিবার ও সমাজে কন্যা-জায়া-জননী হিসেবে নারীর ভূমিকা বিচিত্র ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। একই সঙ্গে নারীর মানবিক মর্যাদা ও ভূমিকা অনস্বীকার্য। নারী-পুরুষ কেউ কারও প্রতিপক্ষ তো নয়ই, বরং একে অপরের পরিপূরক। সমকালীন বিশ্বে নারী নেতৃত্ব অনেকটাই সুপ্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ কথা আরও সত্যি। এ দেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান নারী। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, সংসদ উপনেতাও নারী। সরকার, প্রশাসনসহ বিভিন্ন পেশায় নারীদের অবস্থান সুদৃঢ়। তারপরও কোন কোন ক্ষেত্রে নারী এখনও বৈষম্যের শিকার। নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেলেও দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী সমাজ এখনও অনেকটাই পিছিয়ে। বাল্যবিয়ে, যৌতুকসহ নানাবিধ কারণে এখনও অনেক নারীকে নির্যাতিত হতে হয়। কখনও কখনও দিতে হয় জীবন। ফতোয়াবাজ এবং গ্রাম্য সালিশদারদের হিংস্র থাবায় এখনও ক্ষতবিক্ষত হয় নারী। নিরাপদে চলাফেরা করাও কখনও কখনও হয়ে ওঠে দুষ্কর। এসব অবস্থার জরুরী অবসান হওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রেও নারীর বৈষম্য কমেনি। সেখানেও যৌন হয়রানির শিকারও নারীÑ এমন অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির অন্যতম গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমজীবীদের অধিকাংশই নারী। কৃষিক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ তো সেই অতীতকাল থেকেই। তবে এক্ষেত্রেও নারী অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার।
বর্তমান সরকার নারী উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু নারীকে সম্পত্তিতে ন্যায্য অধিকার দেয়ার বিষয়টি এখনও মীমাংসিত নয়। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরী। নারী সমাজের অধিকার ক্ষুণ্ন করে কোন অবস্থায়ই একটি সুষম সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। একটি পরিপূর্ণ নারীবান্ধব সমাজ গড়ে তোলাই হোক আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অঙ্গীক