কোন এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কত বাড়লো

5

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাশিয়া ও ইউক্রেন সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রোপেন ও বিউটেনের দাম বেড়ে গেছে। দেশের বাজারেও পড়লো এর প্রভাব। পর পর দুই মাস ফেব্রুয়ারি ও মার্চে বাড়লো এলপিজি সিলিন্ডার ও অটোগ্যাসের দাম। দেশে বহুল ব্যবহৃত ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৪০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১ হাজার ৩৯০ টাকা দশমিক ৫৬ পয়সা করা হয়েছে। এ হিসাবে সিলিন্ডারপ্রতি দাম বাড়লো ১৫০ টাকা ৫৬ পয়সা।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এ আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, এলপিজি হচ্ছে পেট্রোলিয়াম উপজাত প্রোপেন ও বিউটেনের সংমিশ্রণ। সাধারণ তাপমাত্রায় এটি গ্যাসীয় পদার্থে পরিণত হয়।
১২ কেজি ছাড়াও সাড়ে ৫ কেজি থেকে ৪৫ কেজি পর্যন্ত সিলিন্ডারের দাম বাড়ানো হয়েছে। ৩ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা থেকে এই দাম কার্যকর হবে।
কমিশন জানায়, সাড়ে ৫ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৫৬৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৩৭ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে সাড়ে ১২ কেজি ১ হাজার ২৯২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৫ কেজি এক হাজার ৫৫০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৭৩৮ টাকা, ১৬ কেজি এক হাজার ৬৫৩ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৮৫৪ টাকা, ১৮ কেজি এক হাজার ৮৬০ থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ৮৬ টাকা, ২০ কেজি ২ হাজার ৬৭ থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৩১৮ টাকা, ২২ কেজি ২ হাজার ২৭৩ থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৫৪৯ টাকা, ২৫ কেজি দুই হাজার ৫৮২ থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৮৯৭ টাকা, ৩০ কেজি ৩ হাজার ১০০ থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার ৪৭৬ টাকা, ৩৩ কেজি ৩ হাজার ৪১০ থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার ৮২৪ টাকা, ৩৫ কেজি তিন হাজার ৬১৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৫৫ এবং ৪৫ কেজি ৪ হাজার ৬৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার ২১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত বছরের জানুয়ারি মাসে গণশুনানি করে এপ্রিল মাসে প্রথমবারের মতো এলপিজি দাম নির্ধারণ করে কমিশন। এরপর থেকে প্রতিমাসে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে এলপিজির দাম ঘোষণা করে আসছে তারা। কিন্তু গত অক্টোবর পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা কমিশনের নির্ধারিত দামে এলপিজি বিক্রি করছিল না। তাদের মতে, কমিশন দামের সঙ্গে তাদের যে পরিবহন ও পরিচলন ব্যয় নির্ধারণ করেছে তা সঠিক নয়। এরপর গত ১৩ সেপ্টেম্বর আবার শুনানি করে তাদের দাবির ভিত্তিতে ব্যয়গুলো পুনরায় নির্ধারণ করে দাম ঘোষণা করা হয়। এরপর দাম প্রায় ব্যবসায়ীদের দাবির কাছাকাছি হওয়ায় বাজারে প্রায় একই দামে কিছু দিন সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে।
এদিকে জানুয়ারি পর্যন্ত জ্বালানির দাম কমতে থাকলেও ফেব্রুয়ারিতে এসে রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক জ্বালানির বাজারে এলপিজির মূল উপজাত প্রোপেন ও বিউটেনের দাম বাড়তে শুরু করে।
সৌদি সিপি অনুসারে মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রোপেন ও বিউটেনের দাম যথাক্রমে প্রতি টন ৮৯৫ এবং ৯২০ ডলারে উঠেছে। যা গত মাসে ছিল ৭৭৫ ডলার। প্রোপেন ও বিউটেনের মিশ্রণ অনুপাত ৩৫: ৬৫ বিবেচনায় মার্চ মাসের জন্য এই নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এরই রেশ ধরে দেশের বাজারে বেড়ে যায় এলপিজির দাম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বেশিরভাগ এলাকায় ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য কমিশন যে দাম নির্ধারণ করেছিল এখন আর সেই দামে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে না। বিতরণ কোম্পানিগুলোর একেক এলপিজির দাম ডিলাররা একেক দামেই নিজেদের ইচ্ছেমতো বিক্রি করছেন। এ অবস্থায় নতুন এই দাম কীভাবে কার্যকর হবে জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করেই আমরা দাম নির্ধারণ করে থাকি। প্রতিমাসেই এই দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। এখন দোকানে দোকানে দামের তালিকা প্রদর্শনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ অবস্থায় কেউ যদি কমিশনের দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি করে তাহলে কমিশনের কাছে সুনির্দিষ্ট কাগজপত্রসহ অভিযোগ করলে কমিশন ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া শুধু কমিশন নয়, গ্রাহকদেরও এই বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।