ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো ব্যর্থ হয়েছে – এরদোয়ান

2

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ইউক্রেনের সংকট নিরসনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ন্যাটো সামরিক জোট ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোগান।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে রুশ হামলায় ন্যাটোর জবাবের সমালোচনা করে এরদোগান বলেন, ন্যাটো জোটের আরও দৃঢ়সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।
কিন্তু ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে।
ন্যাটোর সদস্য দেশ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, রাশিয়ার পদক্ষেপকে নিন্দা জানানো যথেষ্ট নয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ন্যাটোর যে শীর্ষ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, সেই বৈঠকে একটা সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে রুশ সামরিক অভিযানের প্রথম দিনে দেশটিতে অন্তত ১৩৭ জন মারা গেছেন বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করতে ইউক্রেন একাই যুদ্ধ করছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই যুদ্ধে পশ্চিমা বন্ধুদের পাশে পাননি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রাশিয়ার নৃশংস হামলা বন্ধ করতে এবং ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য পশ্চিমা মিত্রদের কাছে তাই আবার আবেদন জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা
প্রথম থেকে ইউক্রেনকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেওয়ার হলেও যুদ্ধের মাঠে দেশটিকে সহায়তায় এগিয়ে আসেনি পশ্চিমারা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ রাশিয়ার ওপর শুধু নিষেধাজ্ঞা দিয়েই থেমে গেছে। এ জন্য হতাশা প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
তবে সরাসরি ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধের মাঠে না থাকলেও রুশ অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ পর থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোর নেতারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে রাশিয়ার ব্যাংক ও অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শীর্ষ পর্যায়ের রুশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
যুক্তরাজ্য পাঁচটি রাশিয়ান ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করেছে এবং সেসব ব্যাংককে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে বাদ দিয়েছে। একই ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা আর জাপানও।
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ায় হাইটেক যন্ত্রপাতি রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে কোনো দেশই এই মুহূর্তে ইউক্রেনের সরাসরি সমর্থনে সেখানে সেনা পাঠাবে না বলে জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে সাত হাজার অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, জার্মানিতে ‘ন্যাটো জোটের মিত্রদের আশ্বস্ত’ করার লক্ষ্যে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো মিশনে ৪৬০ জন সেনা সদস্য পাঠাবে তারা। তবে কানাডা ইউক্রেনে সেনা সহায়তা পাঠানোর চিন্তা করছে কি না, সে বিষয়ে কিছু তারা জানায়নি।
জাতিসংঘ বলছে, এরই মধ্যে অন্তত এক লাখ মানুষ যুদ্ধের সহিংসতা থেকে বাঁচতে ঘর ছেড়েছে। ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী দেশ পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও মলদোভায় শরণার্থী পরিবারের সদস্যদের আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
দ্বিতীয় দিনের যুদ্ধ চলছে
যুদ্ধের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ঢুকে পড়েছে রাশিয়ার সৈন্যরা। তবে ইউক্রেন সেনারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি টুইট বার্তায় জানায়, ‘শত্রুরা’ এখন ওবোলোনে পৌঁছে গেছে। এটি কিয়েভ শহরের কেন্দ্রস্থল, কিয়েভের পার্লামেন্ট থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে।
স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, তারা যেন মলোতভ ককটেল তৈরি করে পাল্টা লড়াই শুরু করেন। সেই সঙ্গে অন্যদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্যও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাসায় থাকলেও বের হতে বারণ করা হয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকে কিয়েভে একাধিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। কিয়েভে রাশিয়ার একটি বিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইউক্রেন। অপরদিকে ইউক্রেনের বড় বড় অনেক শহর এবং সেনা ঘাঁটিতে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
রাশিয়ার পাল্টা ‘অ্যাকশন’
রাশিয়ার আকাশসীমায় যুক্তরাজ্যের সব ধরনের বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ব্রিটেনে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা অ্যারোফ্লোটের চলাচল নিষিদ্ধ করার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়া এই সিদ্ধান্তের কথা জানাল।
রাশিয়ান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যুক্ত বা নিবন্ধিত সংস্থার মালিকানাধীন, ইজারা দেওয়া বা পরিচালিত বিমানের ফ্লাইট রাশিয়ার আকাশসীমা আর ব্যবহার করতে পারবে না।
যুক্তরাজ্যের অবন্ধুসুলভ সিদ্ধান্তের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।
এর আগে মস্কোর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সেনা অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন। এর কয়েক মিনিট পরই ইউক্রেনে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একইসঙ্গে সেখানে ‘শান্তি ফেরাতে’ সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেন। পুতিনের ঘোষণার পর সেখানে গোলাবর্ষণ আরও তীব্র হয়েছে।