র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, আইনজীবী নিয়োগ দেবে সরকার

9

কাজিরবাজার ডেস্ক :
র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আইনজীবী নিয়োগ করতে যাচ্ছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে কাজ চলছে। সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে পিআর ফার্ম, লবিস্ট ও আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাস গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে।
এছাড়া কার্যপত্রে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে মন্ত্রণালয় বলেছে, শ্রম আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে বলে প্রতীয়মান। যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা বাতিল করার পরে বাংলাদেশ একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য পুনরায় সে সুবিধা চালু করেনি।
এতে বলা হয়, বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে কোনও দ্বিপক্ষীয় সফর হয়নি। তবে এ বছর বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে উচ্চ পর্যায়ের সফর আয়োজনের জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, সেখানে আমাদের দূতাবাস আগে কেন জানতে পারেনি? তারা ব্যাখ্যা দিয়ে বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে গ্যাপ তৈরি হয়েছিল।
তিনি বলেন, আমরা আগেই লবিস্ট নিয়োগ করতে বলেছিলাম। সেটা নিয়ে কাজ চলছে। এর বাইরে পিআর ফার্ম, আইনজীবী নিয়োগের কথাও বলেছে। আমরা এ বিষয়ে বলেছি, যা করার করুক। দরকার হলে বাজেট বাড়িয়ে নিক। ফান্ড লাগলে বলুক। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের যে জায়গায় আছে, সেখানে এ ধরনের অনেক কথাবার্তা আসবে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে সরকারের অবস্থান জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠিও দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
এদিকে ভবিষ্যতের জন্য এরকম নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে সতর্ক থাকার জন্য বলেছে সংসদীয় কমিটি।
কমিটির সভাপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এরকম আরও আসতে পারে। দেখা গেলো ইউরোপীয় ইউনিয়নও দিলো। এজন্য আগে থেকে তৎপর হতে হবে।
এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে স্বরাষ্ট্র, বৈদেশিক কর্মসংস্থানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুরাষ্ট্রকে কাজে লাগানোর পরামর্শ
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কাটাতে বাংলাদেশ ও দেশটির অভিন্ন বন্ধুদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি। এ বিষয়ে ফারুক খান বলেন, জাপান, ভারত, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব আমাদের বন্ধু। এই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রেরও ভালো সম্পর্ক। তাদের এই স্যাংশনের বিষয়ে কাজে লাগানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছি। মন্ত্রণালয় এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।
এছাড়া সংসদীয় কমিটি বলেছে, বিভিন্ন দেশে নিখোঁজ হওয়া বা গুম বিষয়ে কোনও বৈশ্বিক ইনডেক্স থাকলে তা সংগ্রহ করতে হবে। অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান কোন জায়গায় তা নির্ধারণ করতে হবে।
ফারুক খান বলেন, আগামী এপ্রিলে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেটের মধ্যে মিটিং হবে। এর আগে মার্চে তিনটি সংলাপ হবে। এসব জায়গায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য বলেছি। যদি দরকার হয় সংসদীয় কমিটিও যাবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মতো অন্য দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কিনা, তা আগামী বৈঠকে বিস্তারিত উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট সেবা সহজ করতে পাসপোর্ট অধিদফতরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য আলাদা উইং খোলার সুপারিশ করা হয়। বাংলাদেশ-মালদ্বীপ বাণিজ্য বৃদ্ধিকল্পে দ্রুত ও সরাসরি নৌ-যোগাযোগ স্থাপন করার ব্যাপারেও কমিটি থেকে সুপারিশ করা হয়।
ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মো. আব্দুল মজিদ খান, মো. হাবিবে মিল্লাত ও নাহিম রাজ্জাক অংশ নেন।