অমর একুশে বইমেলার পর্দা উঠছে আজ, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

11

কাজিরকাজার ডেস্ক :
আজ মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে ভাষাশহীদদের স্মৃতিতে নিবেদিত দুই সপ্তাহব্যাপী অমর একুশে বইমেলা। বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি বইমেলার উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ২০২১ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাশিল্পী, কবি ও গবেষকদের আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার প্রদান করা হবে। এবারের মেলার প্রতিপাদ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। করোনা পরিস্থিতির কারণে এক মাসের পরিবর্তে এবার দুই সপ্তাহব্যাপী চলবে মেলা। সেই সুবাদে ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে মেলা। তবে সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হলে বাড়তে পারে মেলার মেয়াদ। এবারের মেলায় কঠোরভাবে মানা হবে স্বাস্থ্যবিধি। মেলায় প্রবেশ করতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। মাপা হবে শরীরের তাপমাত্রা। সাধারণ দর্শনর্থীর জন্য মেলায় প্রবেশে টিকার সনদ না লাগলেও ফুডকোর্টে বসতে হলে দেখাতে হবে ভ্যাকসিন কার্ড।
আয়ু কমলেও এবার বাড়ছে মেলার সময়। প্রতিবছর মেলা বেলা ৩টা থেকে শুরু হলেও এবার শুরু হবে এক ঘণ্টা আগে। সেই সুবাদে দুপুর দুটায় মেলা শুরু হয়ে চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত। তাই ছুটির দিন বাদে সাধারণ দিনে ৬ ঘণ্টার বদলে ৭ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে বাঙালীর সবচেয়ে বড় এই সাংস্কৃতিক উৎসব।
এদিকে আজ মঙ্গলবার থেকে বইমেলা শুরু হলেও সোমবার বিকেল পর্যন্ত মেলার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি। প্রস্তুত হয়নি স্টল বা প্যাভিলিয়নের কাঠামো। পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের মেলার মাঠে তৈরি হয়নি ইটের পথ। নজরে পড়েনি প্রবেশপথ। লিটলম্যাগ চত্বর পুরোটাই ফাঁকা রয়ে গেছে। মেলা শুরুর আগের দিন এমন পরিস্থিতি গত ২০ বছরে দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেন প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, এবারের মেলা পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু না হয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে। এত সময় পাওয়ার পরও মেলা প্রাঙ্গণ প্রস্তুত হয়নি। উদ্যান অংশে সীমানা বেঁধে দেয়ার কাজটিও অসম্পন্ন রয়ে গেছে। এর আগে কখনও এতটা অগোছালোভাবে মেলা শুরু হয়নি।
আজ মঙ্গলবার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর। অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ প্রদান করা হবে।
এবারের মেলার বিস্তারিত তুলে ধরতে সোমবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি সচিব মোঃ আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান, বইমেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়াদ বাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সময় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংক্রমণ কমে গেলে মেলার মেয়াদ বাড়বে। তবে কঠোরভাবে মানা হবে স্বাস্থ্যবিধি। মাস্ক ব্যতীত প্রবেশ করা যাবে না বইমেলায়।
মেলার সার্বিক আয়োজনের বিষয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, এবারের মেলায় প্রবেশের জন্য প্রত্যেককে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে। সেই সঙ্গে মেলায় প্রবেশের আগে দর্শনার্থীদের স্যানিটাইজ করা হবে। পাশাপাশি মেলা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও স্টলের মালিক ও কর্মীদের করোনার ভ্যাকসিনের সনদ প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তিনি জানান, এবারের চারটি বিষয়কে মাথায় রেখে মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। সেগুলো হলো বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী, ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর এবং বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ৫০ বছর।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলা একাডেমি আঙিনা এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৭ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে অনুষ্ঠিত হবে ২০২২ সালের অমর একুশে বইমেলা। অংশ নিচ্ছে ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠান। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট দেয়া হয়েছে। মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবারই মেলায় সর্বোচ্চসংখ্যক ৩৫টি প্রকাশনা সংস্থার প্যাভিলিয়ন থাকবে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে এবার প্রথমদিকে ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে না।
প্রতিবছর যেসব উপাদান বইমেলায় থাকে যেমন, গ্রন্থ উন্মোচন, লেখক বলছি মঞ্চ, নতুন বইয়ের স্টল, শিশু চত্বর, পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, পর্যাপ্ত প্রবেশ ও বাহির পথ, আশ্রয় কেন্দ্র, পার্কিং ব্যবস্থা, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, নামাজ ঘর, টয়লেট ব্যবস্থা, হুইল চেয়ার, ফুডকোর্ট ছাড়াও এবার মেলায় কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। মেলার অঙ্গসজ্জায় বিশেষেভাবে মেলে ধরা হয়েছে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্বাধীনতার মর্মবাণী সবার মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু-গ্রন্থভুক্ত হস্তলিপি বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে স্থাপনাগুলো সৌন্দর্যম-িত হয়েছে। লিপি পাঠ করে তরুণরা বঙ্গবন্ধুর হাতের লেখার সঙ্গে পরিচিত হবে। একই সঙ্গে তাঁর চিন্তা ও দর্শনের অন্তর্নিহিত অর্থও উদ্ধার করতে পারবে। মেলায় থাকছে বিশেষভাবে সজ্জিত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ বাস্তবায়ন কমিটির একটি প্যাভিলিয়ন। এ বছর মেলার বিন্যাসে পরিবর্তন আনা হয়েছে। গতবার প্যাভিলিয়নগুলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যমাঠে রাখা হয়েছিল। এই বিন্যাস সমালোচিত হয়। ফলশ্রুতিতে এবার প্যাভিলিয়নগুলো উদ্যানের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এতে বিন্যাসে পরিবর্তন ও সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এ বছর তরুণ সাহিত্যিকদের উৎসাহিত করতে লিটল ম্যাগাজিনের স্টলগুলোকে উদ্যানের এম্ফি থিয়েটারের পূর্বদিকে উদ্যানের মূল প্রাঙ্গণে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এর ফলে মেলার বিন্যাসেও পরিবর্তন এসেছে।
বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উšে§াচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪টি প্রবেশ ও ৩টি বাহির পথ থাকবে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর জš§শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে উপজীব্য করে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২২ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেয়া হবে। এছাড়া ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে। এবারের বইমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০৭টি বই।
বইমেলার প্রবেশ ও বাহির পথে পর্যাপ্তসংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। মেলা এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বইমেলা। তবে রাত ৮টা ৩০ মিনিটের পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।