কানাইঘাটে ফরিদ হত্যার ক্লু উদঘাটন, ইউপি মেম্বারসহ ৩ জন গ্রেফতার

3
র‌্যাবের অভিযানে আটক কানাইঘাটের চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ফরিদ উদ্দিন হত্যা মামলার প্রধান ৩ আসামী।

স্টাফ রিপোর্টার :
কানাইঘাটে ফরিদ উদ্দিন হত্যার ক্লু উদঘাটন করেছে র‌্যাব-৯’র সদস্যরা। ঘটনার ৪ দিন পর র‌্যাব এক ইউপি সদস্যসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। একইসঙ্গে প্রকাশ্য দিবালোকে এ নৃশংস্য হত্যাকাতান্ডের রহস্য উদঘাটনেরও দাবী করেছে র‌্যাব। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই আসামীদের গ্রেফতার ও হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাব-৯।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ফরিদ হত্যা মামলার ৩ আসামী গ্রেফতার ও রহস্য উদঘাটনের কথা জানান র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন, কাওছার আহমদ ও মোস্তাক আহমদ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য গত সোমবার ৩১ জানুয়ারি বিকেলে কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের বড়খেওড় এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে ফরিদ উদ্দিনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ফরিদ উদ্দিনের বাবা মো. রফিকুল হক কানাইঘাট থানায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে ২ ফেব্রুয়ারী একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকান্ডের ৪ দিন পর ৩ আসামিকে গ্রেফতার করে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান বলেন, র‌্যাবের গোয়েন্দা তথ্য ও বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হয়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলার শেরপুর থেকে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যমতে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কাওছার আহমদকে দক্ষিণ সুরমা ও মোস্তাক আহমদকে নগরীর বন্দরবাজার থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক বলেন, নিহত ফরিদ ও গ্রেফতারকৃত ৩ জন একই এলাকার বাসিন্দা ও পরষ্পরের আত্মীয়। এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে আগেও উভয়পক্ষের মধ্যে মামলা-হামলার ঘটনা ঘটেছে। নাজিম উদ্দিন সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তাদের বিরোধ ফের চাঙ্গা হয়ে উঠে। নাজিম ও তার অনুসারীরা ফরিদকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। ঘটনার দুইদিন আগে এ নিয়ে ফরিদ তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে নাজিমের ভাই এনাম কমেন্ট করে ফরিদকে শায়েস্তা করার হুমকি দেন।
র‌্যাব কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনার দিন ৩১ জানুয়ারি বিকেলে ফরিদ তার আত্মীয় শাহিনকে নিয়ে মমতাজগঞ্জ বাজার থেকে মোটারবাইকে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে এফআইভিডিবি স্কুলের সামনে যাওয়া মাত্র পাশ্ববর্তী টিলা থেকে বড় ধারালো দেশীয় অস্ত্র হাতে দুইজন মুখোশধারী ফরিদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় দুর্বৃত্তরা ফরিদের একটি পা কেটে নিয়ে পালিয়ে যায়। ফরিদের দুই পায়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই ফরিদ মারা যান। এসময় সাথে থাকা ফরিদের আত্মীয় শাহীনও হামলার শিকার হন। তবে তিনি ঘটনাস্থল থেকে দৌঁড়ে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন এবং স্বজনদের খবর দেন।
নিজাম এবং মোস্তাকের পরিকল্পনায় ৩ গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ফরিদকে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন নিজাম মেম্বার এবং মোস্তাক নিজেদেরকে এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার বাইরে রাখার প্রমাণ দেখাতে সিলেট শহরে চলে আসেন। মূলত সিলেট শহরে থেকেই হত্যাকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট বাকী দুটি টিমের কার্যক্রম সমন্বয় করছিলেন এই দুইজন। ২য় গ্রুপটি ভিকটিম ফরিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিলো এবং ৩য় গ্রুপ পূর্ব থেকে নির্ধারিত জায়গা অর্থাৎ এফআইভিডিবি স্কুলের পাশে জঙ্গলপূর্ণ একটি টিলায় ওৎ পেতে সুযোগ মতো হত্যাকান্ডটি ঘটায়। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বাকি পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, কানাইঘাটের ফরিদ উদ্দিন বাইকে করে গত সোমবার বিকেলে তার ভায়রাভাই শাহীন আহমদকে নিয়ে স্থানীয় মমতাজগঞ্জ বাজার থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। বড়খেওড় এফআইবিডিবি স্কুলের সামনে আসামাত্র কয়েকজন দুর্বৃত্ত ফরিদ উদ্দিনের গতিরোধ করে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে। প্রচুর রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মারা যান ফরিদ। দুর্বৃত্তদের হামলায় ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে থাকা তার ভায়রাভাই শাহীন আহমদও আহত হন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে যায় কানাইঘাট থানার একদল পুলিশ। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। মঙ্গলবার ১ ফেব্রুয়ারি ময়না তদন্তের পর ফরিদ উদ্দিনের লাশ সন্ধ্যার পর দাফন করা হয়।