সার্চ কমিটির অপেক্ষা ॥ নতুন আইন প্রণয়নের পর জনমনে কৌতূহল বেড়েছে

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়ে যাচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ। স্বাভাবিক নিয়মে তার আগেই নতুন ইসি নিয়োগ হওয়ার কথা। এ জন্য তাড়াহুড়া করে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার আইন-২০২২’ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের বলে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠনের কথা। যে কমিটির সুপারিশকৃত ১০ জনের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজনকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন। কিন্তু আইন প্রণয়নের পর ৬ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও সার্চ কমিটি গঠন করা হয়নি। তাই জনমনে প্রশ্ন- সার্চ কমিটি হবে কবে? আর কবেই বা নিয়োগ করা হবে নতুন ইসি? জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার দুদিন পর ২৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ও একই দিনে প্রজ্ঞাপন জারির সঙ্গে সঙ্গে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার আইন-২০২২’ কার্যকর হয়। এর পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই, কবে সার্চ কমিটি আর কবে নিয়োগ হচ্ছে নতুন নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা দলগুলোর মতো বিএনপিসহ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও এ জন্য অপেক্ষা করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের আইনটি যে গতিতে জাতীয় সংসদে উত্থাপন, স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট উপস্থাপন ও পাসের পর প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এর পর সার্চ কমিটি গঠন বিলম্বিত হতে দেখে এ নিয়ে এখন জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। তবে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হলেও তার কিছুদিন পর নতুন কমিশন নিয়োগ দিলে তাতে আইনের কোন ব্যত্যয় হবে না। এ ছাড়া দেশে এর আগেও নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছুদিন পর নতুন কমিশনের দায়িত্ব নেয়ার রেওয়াজ আছে।
আবার নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, নতুন আইন অনুসারে এখনও সার্চ কমিটি গঠনের পর সে কমিটির সুপারিশকৃত নাম থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে রাষ্ট্রপতির নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে অতি দ্রুত সার্চ কমিটি গঠন করে দিলে এ কমিটি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে সুপারিশকৃত নাম রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়ে দিতে পারেন। আইনে সার্চ কমিটি গঠনের ১৫ দিনের মধ্যে নামের তালিকা চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও ১৫ দিনের আগে তা করা যাবে না এমন কথা বলা নেই। তাই কমিটি গঠনের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সার্চ কমিটি বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে ১০ জনের নামের তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে দিতে পারবেন। আর রাষ্ট্রপতিও সার্চ কমিটির কাছ থেকে নামের তালিকা পাওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যেই নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিতে পারবেন।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব না নিতে পারলেও কোন সমস্যা নেই। যেদিন থেকে নতুন নির্বাচন কমিশন কাজ দায়িত্ব নেবে সেদিন থেকে তাদের কার্যকাল শুররু হবে। আর নতুন ইসি দায়িত্ব নেয়ার আগ পর্যন্ত কমিশন সচিবের নেতৃত্বে স্থায়ী কর্মচারীরা রুটিন কাজ চালিয়ে যাবেন। তবে তারা কোন নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারবেন না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত সার্চ কমিটি গঠন ও নতুন নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন দেশের মানুষ। এছাড়া বিএনপিসহ যেসব রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন বিশ্লেষক নতুন আইনে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের সমালোচনা করছেন তারাও অপেক্ষা করছেন নতুন সার্চ কমিটির জন্য। নতুন সার্চ কমিটিতে কারা থাকছেন তা দেখে তারা এ কমিটি সম্পর্কে কি মন্তব্য করবেন তা ঠিক করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
সার্চ কমিটি সম্পর্কে বিভিন্ন রকম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। কেউ বলছেন, ৬ সদস্যের সার্চ কমিটির সদস্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আবার কেউ বলছেন কৌশলগত কারণে কিছুটা বিলম্ব করা হচ্ছে। আবার কেউ বলছেন অধিকতর যাচাই-বাছাই করার জন্য সার্চ কমিটি ঘোষণা দিতে দেরি হচ্ছে। ৬ সদস্যের সার্চ কমিটিতে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার আইন-২০২২’ অনুসারে সার্চ কমিটির চেয়ারম্যানসহ দুজনকে মনোনয়ন দেবেন প্রধান বিচারপতি। আর রাষ্ট্রপতি একজন নারীসহ দুজনকে মনোনয়ন দেবেন। এ ছাড়া পদাধিকারবলে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী এবং সরকারী কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ সোহরাব হোসাইন এই কমিটির সদস্য হবেন।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এই প্রথম আইন প্রণয়ন করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে। ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ অনুসারে রাষ্ট্রপতি ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবেন। এ কমিটির এক চেয়ারম্যান ও ৫ জন সদস্য থাকবেন। এর মধ্যে একজন সদস্য থাকবেন নারী। এর আগে সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুসারে ২০১৭ সালে ৫ বছরের জন্য গঠন করা হয়েছিল বর্তমান নির্বাচন কমিশন। ওই নির্বাচন কমিশন ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
আইন অনুসারে সার্চ কমিটিকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য ১০ জনের নাম সুপারিশ করতে সময় দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ১৫ দিন। তবে এর আগেই এ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য দুজন ও অন্য ৪ কমিশনার পদের জন্য আটজনের নাম প্রস্তাব করবে। সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ৪ জনকে কমিশনার পদে নিয়োগ দেবেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেবে। এর পরই নতুন নির্বাচন কমিশন ৫ বছরের জন্য দায়িত্ব নেবে।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ অনুসারে সার্চ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও ইসি পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিতে হবে। তবে হাতে সময় কম থাকায় এবারের সার্চ কমিটিকে ১৫ দিনের আগেই কাজ শেষ করতে হবে।
৬ সদস্যের সার্চ কমিটির মধ্যে কমপক্ষে ৩ জনের উপস্থিতিতে সভার কোরাম হবে। উপস্থিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রধানের ক্ষমতা থাকবে। সার্চ কমিটি যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করার উদ্দেশে রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের নিকট হতে নাম আহ্বান করতে পারবে। সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশে প্রতিটি শূন্য পদের জন্য ২ জন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার পরও আগের কোন সরকারই নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ণ করেনি। বর্তমান সরকারের আমলে আইন প্রণয়ন করে সেই আইন অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জোরদার হয়। তাই একটি আইন করার বিষয়ে আগে থেকেই এ সরকার প্রস্তুতি শুরু করে। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র ২ মাস আগেও আইন প্রণয়ণের বিষয়ে সরকারের জোরালো কোন পদক্ষেপ না দেখে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও বিদেশী কূটনীতিকরা অধিকতর তৎপর হয়। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েও ২৪টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন প্রণয়নের জোর দাবি জানায়। এ পরিস্থিতিতে সরকার আগে থেকে ফাইল ওয়ার্ক করে রাখা আইন প্রণয়নের জন্য কাজের গতি বাড়ায়। অবশেষে সকল প্রক্রিয়া শেষ করে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিযোগ আইন-২০২২’ প্রণয়ন করে।
১৭ জানুয়ারি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনরার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’-এর খসড়া মন্ত্রী সভায় উত্থাপণ ও অনুমোদন করা হয়। এ আইন পাসের উদ্দেশে ২৩ জানুয়ারি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জাতীয় সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনরার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ উত্থাপণ করেন। ওইদিনই বিলটি যাচাই-বাছাই করে রিপোর্ট পেশ করার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করেন স্পীকার। এর পর ওই কমিটি বিলটি রিপোর্ট আকারে সংসদে উপস্থাপনের পর এর ওপর ১২ জন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য ছাঁটাই ও সংশোধনী প্রস্তাব দেন। এর পর কিছু সংশোধনীসহ ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিলের শিরোনামেও সামান্য সংশোধন হয়। সংশোধনীসহ বিলটি পাস হয় ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনরার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ শিরোনামে। ২৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি এ বিলে স্বাক্ষরের মাধ্যমে এটি আইনে পরিণত হয়। ওইদিনই জাতীয় সংসদ থেকে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনরার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’-এর গেজেট প্রকাশ করা হয়।
সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে- ‘১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদান করবেন। সংবিধানের ১১৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবেন।’ তাই সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল ২০২২’ সংসদে উত্থাপন করেন। পরে এটি ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ শিরোনামে পাস হয়।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনরার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ এ উল্লেখ করা হয়েছে- রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের শূন্য পদে নিয়োগদানের জন্য এ আইনে বর্ণিত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করবার জন্য ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবেন। এর মধ্যে একজন নারী সদস্য থাকবেন। এই ৬ সদস্যের মধ্যে এক নম্বরে থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি, তিনি কমিটির চেয়ারম্যান হবেন। এরপর থাকবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক এবং বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক যার মধ্যে একজন নারী।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার কারা হতে পারবেন এবং তাদের যোগ্যতা কি হবে সেক্ষেত্রে বলা হয়েছে, তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। বয়স কমপক্ষে ৫০ বছর হতে হবে। কোন গুরুত্বপূর্ণ সরকারী, আধা-সরকারী,স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারী বা বিচার বিভাগীয় পদে কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হওয়ার অযোগ্যতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, আদালতের মাধ্যমে যদি কেউ অপ্রকৃতস্থ হিসেবে ঘোষিত হন, দেউলিয়া ঘোষণার পর দেউলিয়া অবস্থা থেকে মুক্ত না হন, অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করেন বা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন, নৈতিক স্খলন এবং সেক্ষেত্রে যদি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদন্ডে দন্ডিত হন, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) এ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২ এর অধীনে কোন অপরাধের জন্য দ-িত হন এবং আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে কেউ অধিষ্ঠিত থাকলে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার হতে পারবেন না।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’-এর বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতোপূর্বে গঠিত সার্চ কমিটি ও এই কমিটি সম্পাদিত কার্যাবলী এবং এ উক্ত সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বৈধ ছিল বলে গণ্য হবে এবং উক্ত বিষয়ে কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।
দেশে এ পর্যন্ত সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে দুইবার নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। ২০১২ সালে জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে সার্চ কমিটির মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো প্রধান নির্বাচন কমিশনসহ অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেয়া হয়। ২০১৭ সালে বর্তমান নির্বাচন কমিশনও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। আর স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সংবিধান নির্দেশিতভাবে এবারই প্রথম জাতীয় সংসদে আইন পাস করে সে আইনের আলোকে সার্চ কমিটি গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। এ কমিটির সুপারিশ অনুসারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি।
‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিযোগ আইন-২০২২’ সম্পর্কে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হয়, তখনই নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনের বিষয়ে কথা হয়েছিল। এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল সংলাপ করতে গেছে এবং যারা যাননি তারা সবাই নতুন আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল। এরপর আইন পাসের জন্য সংসদে বিল উত্থাপন করা হয় এবং সকল প্রক্রিয়া শেষ করে আইন পাস করা হয়। এ আইনের বলে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম সুপারিশ করবে। এর পর রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।