গোয়াইনঘাট থেকে সংবাদদাতা :
দীর্ঘ ২৪ দিন পর মঙ্গলবার থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতেই (অটোএসএমএস) পরীক্ষামূলকভাবে গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল স্থল বন্দর দিয়ে পূণরায় আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে এই কার্যক্রম শুরু করা হয়।
যদিও এই অটো এসএমএস বা ডিজিটাল পদ্ধতি চালুর প্রতিবাদে গত ৭ জানুয়ারি থেকে টানা ২৪ দিন ধরে এই বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ কার্যক্রম রেখেছিল ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু গত সোমবার বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক শেষে তামাবিল স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী নেতারা পরীক্ষামূলকভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আমদানি রপ্তানি শুরু করতে সম্মত হন। মঙ্গলবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে আমদানি রপ্তানি শুরুর প্রথম দিন বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভারতীয় শতাধিক ট্রাক পাথর নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যা ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে আমদানির চেয়ে কয়েকগুণ কম।
জানা যায়, দেশে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তামাবিল স্থল ন্দরের কার্যক্রম সচল থাকলেও পণ্য আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে অটো এসএমএস সফটওয়্যার বা ডিজিটাল পদ্ধতি চালুর প্রতিবাদে গত ৭ জানুয়ারি থেকে এই বন্দরের ব্যবসায়ীরা আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রেখেছিল। ফলে একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা নিজেরা বড় ধরণের লোকসানের সম্মূখীন হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে বেকার হয়ে পড়েছিল বন্দর সংশ্লিষ্ট প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক। একই সঙ্গে সরকারও রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে প্রায় ১০-১২ কোটি টাকা।
তামাবিল স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, গত সোমবার বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের সাথে ঢাকায় বৈঠক হয় তাদের। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি অটো এসএমএস বা ডিজিটিাল পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক ভাবে আমদানি রপ্তানি চালু করতে সম্মত হন তারা। যার প্রেক্ষিতে পরীক্ষামূলক ভাবে অটোএসএমএস পদ্ধতিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে ব্যবসায়ীরা আমাদানি রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করেছেন। আর এই পদ্ধতিতে আমদানি রপ্তানির বিষয়টি সরজমিন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (ট্রাফিক) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীর এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল তামাবিল স্থলবন্দরে অবস্থান করছেন। তারা আমদানি রপ্তানির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ শেষে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
এ বিষয়ে তামাবিল স্থলবন্দরের পাথর, চুনা পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন ছেদু জানান, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরীক্ষামূলক ভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম চালু করা হলেও এই পদ্ধতিতে ধীরগতি ও ডাউকির সাথে পণ্য পরিমাপের ক্ষেত্রে ওজনে তারতম্যের কারণে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হবে। তাই আগের মতো পণ্য আমদানি-রপ্তানি চালু করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরাও চাই ডিজিটালাইজেশন হোক। তবে, ডাউকি স্থলবন্দরের কাজ শেষ হওয়ার পর একসঙ্গে দুই দেশে তা চালু হলে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হবেনা আর সরকারও সঠিক রাজস্ব পাবে।
তামাবিল স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা আশিকুর রহমান জানিয়েছেন, শুধু বন্দর ট্যারিফ বাবদ প্রতিদিন সরকারের ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা ও রাজস্ব বাবদ আরও প্রায় ৩০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এতে করে গত ২৪ দিন ধরে আমদানি রপ্তানি বন্ধ থাকায় সরকার প্রায় ১০-১২ কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।
তামাবিল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম ভূঁঁইয়া জানান, বন্দর সচল থাকলেও ডিজিটাল পদ্ধতি চালুর প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা আমদানি রপ্তানি বন্ধ রেখেছিল। মঙ্গলবার থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতেই পূণরায় আমদানি রপ্তানি শুরু করেছেন তারা। আর এই পদ্ধতিতে আমদানি রপ্তানির বিষয়টি সরজমিন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (ট্রাফিক) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবীর এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল তামাবিল স্থল বন্দরে অবস্থান করছেন। ওনারা এখানে দুই তিন দিন অবস্থানের পর ডিজিটাল পদ্ধতিতে আমদানি রপ্তানির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ শেষে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
উল্লেখ্য, আমদানি বন্ধের আগে মেঘালয় ও শিলং থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে ছয়শ থেকে সাতশ ট্রাক তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতো। ভারতের ডাউকি স্থলবন্দরে ফিতা দিয়ে মেপে ওইসব পণ্য তামাবিল বন্দরে প্রবেশের পর একই পদ্ধতিতে মাপা হতো। ২০২১ সালে তামাবিল স্থলবন্দরে অটোএসএমএস পদ্ধতি চালুর উদ্যোগের পর ৭ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর করা হয়। আর নতুন পদ্ধতি চালুর প্রতিবাদে ওইদিন থেকেই আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেন তারা। এতে বদলে যায় তামাবিল স্থলবন্দরের দৃশ্যপট। স্থবির হয়ে পড়ে তামাবিলের সকল কার্যক্রম।