কাজিরবাজার ডেস্ক :
মহামারী করোনার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি উত্তরণে প্রায় ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে সরকার। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলানোর পর নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চলমান বিধিনিষেধের কারণে নতুন করে চাপ তৈরি হয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতিতে। এ অবস্থায় চলতি বাজেটে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের শিল্প খাত রক্ষায় দ্রুত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, আগামী বাজেট হতে হবে ব্যবসা ও করবান্ধব। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বেসরকারী খাতে চাঙ্গা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ শতভাগ বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মাসব্যাপী প্রাক বাজেট আলোচনা সূচী চূড়ান্ত করেছে এনবিআর। জানা গেছে, বাজেট ২০২১-২২ প্রথম প্রান্তিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ। ওই প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, করোনার কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক বিপর্যয় হতে ঘুরে দাঁড়ানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ যেখানে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির সম্মুখীন হয়েছে সেখানে বাংলাদেশ একটি আশানুরূপ প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, চলতি বাজেটে মোট ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা র্নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। সার্বিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় মোট ব্যয় ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী ব্যয় ৬ দশমিক ৯২ শতাংশ কমেছে। ইতোমধ্যে আগামী বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে।
জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের মধ্যে রাজস্ব আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয় ও প্রবাস আয় বৃদ্ধির কারণে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে অর্থনীতি। এ অবস্থায় আগামী বাজেটের আকার বাড়িয়ে ৭ লাখ কোটি টাকার চিন্তা-ভাবনা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আকার কিছুটা কমানো হতে পারে। তবে এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি অর্থবিভাগ। ওমিক্রনের বিস্তার ঘটায় নতুন করে সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা রয়েছে। তবে বেশ জোরেশোরেই আগামী বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই মধ্যে বাজেটকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক, যৌক্তিক, সুষম ও গণমুখী করার লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে মাসব্যাপী প্রাক বাজেট আলোচনা সূচী চূড়ান্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
শুল্ক, ভ্যাট ও কর সংক্রান্ত খাতভিত্তিক প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রাক বাজেট সভা ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ২০ মার্চ পর্যন্ত চলবে। এবার প্রাক বাজেট আলোচনা ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেটে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বাজেট সমন্বয়কারী ও এনবিআরের কাস্টমস বিভাগের প্রথম সচিব ড. মোঃ নেয়ামুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রাক বাজেট আলোচনা শুরু হয়ে শেষ হবে এনবিআর ও এফবিসিসিআইর পরামর্শক কমিটির সভার মাধ্যমে। এর আগে গত ২০ জানুয়ারি কাস্টমস বিভাগের প্রথম সচিব ড. মোঃ নেয়ামুল ইসলাম প্রধান বাজেট সমন্বয়কারী করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এরপর দেশের সব চেম্বারস ও এ্যাসোসিয়েশনকে তাদের বাজেট প্রস্তাবনা লিখিত আকারে এফবিসিসিআইতে জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে প্রস্তাবের আরেকটি সফট কপি ই-মেইলের (budgetnbr@gmail.com) মাধ্যমে প্রধান বাজেট সমন্বয়কারী বরাবরে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
২৮ প্যাকেজে ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা : অতিমারী করোনার কবল থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশনায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যা জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ। গড় আয়ু, মাথাপিছু আয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ অগ্রগতি সাধন করছে বলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ অতিমারী হতে উত্তরণে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আয়, রফতানির প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ এবং মূল্যস্ফীতি প্রভৃতি মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চালকসমূহের অবস্থান সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।