আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় শেষ হচ্ছে রাষ্ট্রপতির সংলাপ

4

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ সোমবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়েই শেষ হবে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের এবারের ধারাবাহিক সংলাপ। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আজ বিকেল চারটায় গণভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেবেন।
বিএনপিসহ তাদের সমমনা কয়েকটি দল সংলাপে না আসলেও আজকের শেষ সংলাপের পর গঠন করা হবে ‘সার্চ কমিটি’। গঠিত এই সার্চ কমিটিই নতুন ইসি গঠনের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করবে রাষ্ট্রপতির কাছে। সেই তালিকা থেকেই রাষ্ট্রপতি আগামী পাঁচ বছরের জন্য নতুন ইসি গঠন করবেন। সেই কমিশনের অধীনেই ২০২৩ সালের শেষে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
জানা গেছে, এবারের সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া গতবারের মতোই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের একজন বিচারককে আহ্বায়ক করে গঠিত সার্চ কমিটিতে হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, সরকারী কর্ম-কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রধান হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) থাকতে পারেন। এ ছাড়া দুজন দেশের বিশিষ্ট নাগরিক থাকবেন এই কমিটিতে, তাদের একজন হতে পারেন নারী।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়য়া স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ সোমবার বিকেল চারটায় বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করবে। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ড. আব্দুর রাজ্জাক, লেঃ কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান।
গত ২০ ডিসেম্বর সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবারের সংলাপ শুরু করেন। আজ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে নতুন ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এবারের সংলাপ শেষ করবেন রাষ্ট্রপ্রধান। বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, আজকের বৈঠকের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শেষ হবে। এর পর সার্চ কমিটি গঠন করে দেয়া হবে। রাষ্ট্রপতির সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে। সেখান থেকেই ঘোষণা দেয়া হবে।
সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে। এ বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দেবেন।
স্বাধীনতার পর ৫০ বছরেও কোন সরকার এ সংক্রান্ত আইন করেনি। ফলে প্রতিবারই ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মতভেদ তৈরি হয়। গত দুইবারের মতো এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠনের উদ্যোগ নিয়ে রাষ্ট্রপতি সংলাপ শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩২টি দলকে তাতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বঙ্গভবন।
আগের সংলাপগুলোতে অংশ নেয়া বিএনপি এবার রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে সাড়া দেয়নি। এ ছাড়া সিপিবি, বাসদ, জেএসডিসহ আরও কয়েকটি দল সংলাপে অংশ নেয়নি। তবে সংলাপে অংশ নেয়া বেশিরভাগ দলই ইসি গঠনে সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনের কথা বলেছেন। সরকার তরফেও দ্রুতই ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে।
গত দুই নির্বাচন কমিশনে পাঁচজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ পাওয়া এই ব্যক্তিদের সবার ক্ষমতা সমান হলেও সমন্বয়ের জন্য একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব দেয়া হয়। কে এম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে। এর মধ্যেই রাষ্ট্রপতিকে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে।