স্মৃতি সতত সুখের হয় যদি তার কেন্দ্রে থাকেন ইতিহাসের মহানায়ক। সেই স্মৃতি সংরক্ষণও তখন পরিণত হয় জাতীয় দায়িত্বে। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ের ২৪ দিন পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। বঙ্গবন্ধু যে উড়োজাহাজে দেশে ফিরেছিলেন অবশেষে সেটি শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে এটি জার্মানির হার্মেস্কেইলের একটি প্রাইভেট এভিয়েশন মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। এটি কমেট ফোর-সি মডেলের এয়ারক্রাফট। দীর্ঘ কয়েক দশক এটি হার্মেস্কেইলের ফ্লাগুস্টেলাং পিটার জুনিয়র এভিয়েশন মিউজিয়ামে রাখা হয়েছে। এই সংবাদে সঙ্গত কারণেই দেশবাসী আবেগাপ্লুত। মানুষ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী ওই উড়োজাহাজটি জার্মানির জাদুঘর থেকে বাংলাদেশের জাদুঘরে স্থানান্তরিত হবে নিশ্চয়ই। এমন প্রত্যাশা স্বাভাবিক, যার বাস্তবায়নও অসম্ভব নয়।
বাংলাদেশ এভিয়েশন হাব সূত্রে দেশবাসী জানতে পেরেছে, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর জাতির পিতার স্মৃতিবিজড়িত এয়ারক্রাফটটি ১৯৬৩ সালে যুক্তরাজ্যের রয়েল এয়ার ফোর্সের জন্য নির্মিত হয়েছিল। ১৯৭৫ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের ড্যান-এয়ার লন্ডন নামে একটি এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানের হয়ে পাঁচ বছর বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করে এটি। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখে এটি জার্মানির ডুসেলডর্ফে রাখা হয়। এর কিছুদিন পরই এটি ফ্লাগুস্টেলাং পিটার জুনিয়র এভিয়েশন মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
জাতির পিতা পাকিস্তানের কারাগার থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে। ৮ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে একটি বিশেষ ফ্লাইট ৬৩৫-এ করে অবতরণ করেন। লন্ডনে পৌঁছে সকালে তিনি কথা বলেন ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথসহ অনেকের সঙ্গে। টেলিফোনে কথা বলেন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে। কথা বলেন স্বাধীন দেশে অবস্থিতি তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গেও। পরে ব্রিটেনের বিমানবাহিনীর কমেট ফোর-সি মডেলের একটি বিমানে করে ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন বঙ্গবন্ধু। ১০ তারিখ সকালে তিনি নামেন দিল্লীতে। সেখান থেকে একই উড়োজাহাজে করে ঢাকায় আসেন তিনি। আর ঢাকায় তথা স্বদেশের মাটিতে মহান নেতার প্রত্যাবর্তনের পর আবেগাপ্লুত জাতি তাকে কী বিপুলভাবে বরণ করে নিয়েছিল, সেটি বর্তমান তরুণ প্রজন্ম কল্পনাই করতে পারবে না।
আমরা আশাবাদী, জাতীয় স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যে বিমানটি মাতৃভূমির মাটিতে ফিরিয়ে এনেছিল, সেটি দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা নেবে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে মুজিববর্ষে এটিই হবে জাতির জন্য সবিশেষ স্মরণীয় প্রাপ্তি।