কাজিরবাজার ডেস্ক :
দুর্ঘটনারোধে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ট্রাফিক আইন পড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া রাস্তা পারাপারে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে স্কুল কর্তৃপক্ষের লোক রাখারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়ার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের চারটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এগুলো হলো ঢাকা এয়ারপোর্ট মহাসড়কে শহীদ রমিজ উদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজ সংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাস, সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিঙ্ক ৪ মহাসড়ক, বালুখালী (কক্সবাজার), ঘুনধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগসড়ক এবং রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর চেংগী নদীর ওপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতু।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনারোধে সারাদেশের জাতীয় মহাসড়কে ২০১০ থেকে ২০১২ সালে ২০৯টি ব্ল্যাকস্পট (দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান) চিহ্নিত করা হয়েছে। তাতে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে আরও ২৫২টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে ১৭২টির প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ৮০টি ব্ল্যাকস্পটেও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর ফলে সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে।
এ সময় পথচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের দেশে একটা প্রবণতা আছে- দুর্ঘটনা হলেই গাড়ির ড্রাইভারকে পেটানো হয়। অনেক সময় গণপিটুনিতে তাকে মেরেই ফেলে। কেন দুর্ঘটনা ঘটল, কার দোষে ঘটল- সেটা খুঁজে বের করা দরকার। আর সবার ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার এবং সেটা মেনে চলা দরকার। মোবাইল ফোন কানে দিয়ে সড়ক পার, রেললাইনে চলা বন্ধ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ দৌড়ে রাস্তা পার হবেন না। রাস্তা পারাপারেই কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সব জায়গায় ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস করা আছে। সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীদের বলব, রাস্তায় চলাচলে ট্রাফিক আইন মানতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাফিক আইনটা শেখাতে হবে।
তিনি বলেন, স্কুলে যাতায়াতে নিরাপদে রাস্তা পারাপারে ট্রাফিক পুলিশ সহায়তা করবে, তবে স্কুল কর্তৃপক্ষেরও লোক রাখতে হবে। অনেক সময় বাচ্চারা অন্যদের মানতে চায় না। স্কুল কর্তৃপক্ষের লোক থাকলে ঠিকই মানবে। প্রত্যেকটা স্কুলকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশ দেবে, যাতে তাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারে উদ্যোগ নেয়।
আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। দোষ কার, সেটা পরে দেখা যাবে। অনেক সময় ধাক্কা লেগে পড়ে যায়, সে হয়ত বেঁচে যেত। কিন্তু ড্রাইভার গাড়ি থামালে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে এই ভয়ে সে পিষে চলে যায়। একটা মানুষের জীবন চলে যায়। কিছু হলেই ড্রাইভারকে ধরে পেটাবেন, গাড়িতে আগুন দেবেন, এটা ঠিক না। আইন কেউ হাতে তুলে নেবেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তারাই সেটা দেখবে।
এ সময় গাড়ির চালক ও হেলপারদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি তারা অনেক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে, ঝিমিয়ে পড়ে। সে জন্য মহাসড়কের পাশে চালক ও যাত্রীর জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা নিচ্ছি। সুনির্দিষ্ট দূরত্বে একটি করে বিশ্রামাগার থাকবে। পাশাপাশি চালকদের ট্রেনিংয়েরও ব্যবস্থা করছি। গাড়ি বাড়ছে, চালক বাড়ছে না। সে জন্য সমস্ত উপজেলায় চালকদের ট্রেনিং দেয়ার ব্যবস্থা করছি। তাহলে এ সঙ্কট কিছুটা কমবে। ড্রাইভার ক্লান্ত হলে গাড়ি থামাবেন, রেস্ট নেবেন। কিন্তু হেলপার দিয়ে চালানো ঠিক নয়, এটা অন্যায় কাজ।
করোনার সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ব্যাপক কর্মসূচী ছিল আমরা ভার্চুয়ালি করছি। কারণ করোনা নতুনভাবে হানা দিয়েছে। সকলে নিয়ম মেনে চলবেন। মাস্ক পরবেন। সবকিছু স্বাভাবিক চলুক আমরা চাই। উন্নয়নের নানা কাজ করছি। ফলে আমরা দ্রুত এগিয়ে যাব। ২২ সালে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আছে উদ্বোধন করব আমরা। দেশের মানুষের জন্য গত ১৩ বছরে আমরা নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি। এটি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম, সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং চীফ মেজর জেনারেল ইবনে ফজল শায়েকুজ্জামানসহ বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। প্রকল্পের স্পট থেকে সরকারী কর্মকর্তা ও উপকারভোগীরাও অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।