ভোটচুরির অভিযোগে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল – প্রধানমন্ত্রী

6
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’-দিবস এর ৫০ বছর উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোটচোরদের জনগণ রেহাই দেয় না বলেই ভোটচুরির অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, ক্ষমতায় বসে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট থেকে তৈরি হওয়া দল বিএনপি। ভোটচুরির অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটি অনেক উর্বর। এখানে যেমন অনেক ভালো মানুষ জন্মে, তেমনি পরগাছাও জন্ম নেয়। তেমন বেইমান পরগাছাও এদেশে ছিল। তাদের ইচ্ছা ছিল এদেশ যেন উন্নতি করতে না পারে। এরা মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী কিছু প্রেতাত্মা এখনও রাজনৈতিক অঙ্গনে আছে। তাই আওয়ামী লীগ ভাল কাজ করলেই পেছনে লেগে থাকা একশ্রেণীর মানুষের অভ্যাস।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। পরাধীন বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ থেকে মুক্ত করার জন্য কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধু। এই বাঙালি জাতির জন্যই আত্মোৎসর্গ করে গেছেন বঙ্গবন্ধু। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যাকান্ডের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, এ দেশের মানুষের জন্য যে মানুষটার বুকভরা ভালবাসা ছিল, যে মানুষগুলো আমাদের ঘরে বসে খেয়ে-পরে গেলো, তারা কীভাবে ওই বুকে গুলি চালায়? তিনি বলেন, দেশীয়-আন্তর্জাতিক চাপে বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তান সরকার। অথচ বঙ্গবন্ধু যখন বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করেছিলেন তখন তাকে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাহাত্তরে বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর থেকেই কিছু কিছু লোকের শুরু হলো নানা ধরনের সমালোচনা। এটা হলো না, ওটা হলো না। এই হচ্ছে না, সেই হচ্ছে না। একবারও তারা ভেবে দেখল না, এই দেশটা ছিল পরাধীন। দুইশ’ বছর ব্রিটিশদের গোলামি করেছে। তারপর ২৩ বছর পাকিস্তানীদের গোলামি করতে হয়েছে। এরপর মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়েছে। পাকিস্তানের একটি প্রদেশকে যিনি রাষ্ট্রে উন্নীত করেছেন, ধীরে ধীরে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাকে সময় দেয়া হলো না। যারা সেই সময় এরকম কলাম লিখেছেন, আন্দোলন বা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, তারা কী ভেবেছিল? কী করতে চাচ্ছিল তারা? সেটাই আমার প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর আজও পাইনি।
স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ভুট্টো নিজের চামড়া বাঁচাতে এবং বাংলাদেশে আটকে পড়া ৯৬ হাজার পাকিস্তানীকে ফেরত নিতে ও আন্তর্জাতিক চাপে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশে ফিরে তিনি সবার আগে ফিরে যান দেশের মানুষের কাছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের দায়িত্ব নিয়ে পরিবর্তন শুরু করেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি আদায় করে দেন। মানুষ ও দেশের প্রতি ভালবাসা না থাকলে এগুলো হতো না।
শেখ হাসিনা বলেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ও পাকিস্তান আধা ঔপনিবেশিক আমলের যে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, তা পরিবর্তন করে বাংলাদেশের গ্রামের তৃণমূল মানুষের হাতে ক্ষমতার অধিকার দিতে চেয়েছিলেন। জনগণকে প্রজাতন্ত্রের মালিক করতে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী দিয়ে সেই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সার্বিক উন্নয়নকে কেন্দ্রীভূত না রেখে বিকেন্দ্রীকরণ করে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলেন। যেন বাংলাদেশ কারও মুখাপেক্ষী না হয়। দেশের মানুষ যেন বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। যখনই তিনি ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙ্গে নতুন সমাজ বিনির্মাণের পদক্ষেপ নেন, তখনই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত থেকে সভাপতিত্ব করেন। আলোচনা সভায় সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সম্পাদক ডাঃ দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী বক্তব্য রাখেন।