উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ॥ তরুণদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর

10

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর (বিএমএম) কেবল দেশের সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসকে ধারণ করবে না, তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিজয় স্মরণীয় বঙ্গবন্ধু জাদুঘর প্রান্তে আয়োজিত আন্তর্জাতিকমানের স্থাপত্য কীর্তি বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই জাদুঘরটা শুধু প্রদর্শনীর জন্য না, এটা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। তাদের ভেতরে যেমন একটা আকর্ষণ হবে, আবার তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে এবং দেশপ্রেম জাগ্রত হয়ে তারা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে, আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যোগদান করতে আগ্রহী হবে, এগিয়ে আসবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাদুঘরটি দেশের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য একটি মাইলফলক হবে। যার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম ও শিশুরা মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান সম্পর্কে জানতে পারবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি এটা হবে সারা পৃথিবীর মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তিনির্ভর সামরিক জাদুঘর। এখানে সেনা বাহিনী, নৌ বাহিনী এবং বিমান বাহিনীর জন্য পৃথক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকায় এখানে আগত তরুণ থেকে বয়োবৃদ্ধরা যেমন এ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে পারবেন, তেমনি তরুণ প্রজন্ম সশস্ত্র বাহিনীতে যোগদানে আরও আগ্রহী হবে। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আরও উদ্বুদ্ধ হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, এ কারণেই ক্ষুদ্র্র পরিসরে থাকা আমাদের সামরিক জাদুঘরকে বৃহৎ পরিসরে এবং আরও আকর্ষণীয় করে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের পাশে বিজয় স্মরণীতে তৈরির উদ্যোগ তার সরকার গ্রহণ করে। পাশাপাশি সেখানে সরকারী উপহারগুলো প্রদর্শনীর জন্য একটি তোষাখানা জাদুঘরও নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। যার নির্মাণের দায়িত্ব পায় সমারিক বাহিনী। পাশাপাশি সামরিক জাদুঘরটা যেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি সামরিক জাদুঘর হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সেটাই তার আকাক্সক্ষা ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের যে ইতিহাস রয়েছে- আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার ইতিহাস, সশস্ত্র বাহিনী আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। কাজেই সে সম্পর্কে যেন আমাদের দেশের মানুষ জানতে পারে, জ্ঞানার্জন করতে পারে, তাদের কর্মকা- উপলব্ধি করতে পারে।
জাদুঘর থেকে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে আরও বলেন, আমাদের বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক। আমাদের সামরিক বাহিনী, সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী কি কাজ করে, কীভাবে চলে বা অতীতে তারা কি করেছেন, সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে মানুষকে জানানো একান্তভাবে দরকার।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্র নীতি মেনে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করছে জানিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে হত্যার ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই হত্যাকা-ে আমরা আপনজন হারিয়েছি সত্য, কিন্তু বাংলাদেশ কী হারিয়েছিল ? একের পর এক ক্যু হয়েছে, কত সামরিক অফিসার, সৈনিককে জীবন দিতে হয়েছে। অনেক পরিবার খোঁজও পায়নি আপনজনের। পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, যেই আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়। সেই সময় বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থেমে যায় এবং দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারে এসে সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক করে গড়ে তোলা, তাদের প্রযুক্তি জ্ঞান দেয়া এবং বিশ্ব¦ দরবারে যেন তারা মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেইভাবে আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে পাঁচটি বছর আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, বাংলাদেশের সেটা স্বর্ণযুগ ছিল। বাংলাদেশের মানুষের মাঝে একটা আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছিল যে, তারাও জীবনে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। আর সরকার যে জনগণের সেবক, সেটা আমরা প্রমাণ করেছিলাম।
দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়ায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ সময় সরকারে থাকার ফলে আজকে বাংলাদেশকে আমরা শুধু উন্নয়ন করা না, বাংলাদেশকে আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি, যেটা ২০০৮-এর নির্বাচনের ইশতেহারে আমাদের ঘোষণা ছিল।
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরটি বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারের পশ্চিম পাশে ১০ একর জমিতে নির্মিত হয়েছে। যেখানে স্বাধীনতার আগে ও পরে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উপস্থাপন করা হয়েছে। জাদুঘরটিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য নির্ধারিত গ্যালারিসহ ছয়টি পৃথক অংশ রয়েছে এবং প্রতিটি বাহিনীর গ্যালারিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার।
এখানে আর্ট গ্যালারিসহ মাল্টিপারপাস এক্সিবিশন গ্যালারি, ব্রিফিং রুম, স্যুভেনির শপ, ফাস্টএইড কর্নার, মুক্তমঞ্চ, থ্রিডি সিনেমা হল, মাল্টিপারপাস হল, সেমিনার হল, লাইব্রেরি, আর্কাইভ, ভাস্কর্য, মুর‌্যাল, ক্যাফেটারিয়া, আলোকজ্জ্বল ঝর্ণা ও বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত প্রান্তর সবকিছু মিলে একটি চমৎকার দৃষ্টিনন্দন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বাংলাদেশী সামরিক বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে জনগণকে শিক্ষিত করার জন্য, বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর ১৯৮৭ সালে মিরপুর সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যা পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে ঢাকার বিজয় সরণি রোডের পাশে বঙ্গবন্ধু প্ল্যানেটোরিয়ামের পশ্চিম পাশে বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়।
জাদুঘরটি বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর গৌরবময় অতীত, চ্যালেঞ্জ, অর্জন এবং মূল অগ্রগতি সম্পর্কে দেশের জনগণকে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে প্রামাণিক তথ্য প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রদর্শিত তথ্য গবেষণা উদ্দেশে ব্যবহার করা যেতে পারে।