কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে হলে পরমত সহিষ্ণুতাসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে একে অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান। রাজনীতিতে সহমত সংস্কৃতি গড়ে তোলা অপরিহার্য উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে এই আহ্বান জানান। একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে সোমবার (৩ জানুয়ারি) গণতন্ত্রী পার্টি এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে পৃথক পৃথক আলোচনায় বসেন রাষ্ট্রপতি। আবদুল হামিদ বলেন, ‘সুস্থ রাজনীতির বিকাশে দল পরিচালনায় নীতি ও আদর্শের প্রতিফলন ঘটাতে হবে।’
সোমবার সন্ধ্যায় গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনের দরবার হলে আলোচনায় অংশ নেন। সংলাপ শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানান, গণতন্ত্রী পার্টি ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন এবং সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনসহ আট দফা প্রস্তাবনা দেন রাষ্ট্রপতির কাছে।
অপরদিকে, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের চেয়ারম্যান মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজি এবং মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজীর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আলোচনায় অংশ নেন। সংলাপে তারা একটি নিরপেক্ষ, সক্ষম, শক্তিশালী, দক্ষ ও যোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি স্থায়ী আইন প্রণয়নসহ ছয় দফা প্রস্তাবনা পেশ করেন রাষ্ট্রপতির কাছে।
সংলাপে গণতন্ত্রী পার্টির নেতারা বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের ও প্রস্তাব করেন।
তারা প্রস্তাব করেন যে, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলের নেতা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠন করা যেতে পারে এবং এই কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করবেন।
তারা নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে যোগ্য, দক্ষ, নির্মোহ, সৎ ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদেরকে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব করেন।
গণতন্ত্রী পার্টির নেতারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে এবং নির্বাচনে ধর্মের অপব্যবহার, কালো টাকা, অস্ত্র ও পেশিশক্তির ব্যবহারকারীদের তাৎক্ষণিক গ্রেফতার ও শাস্তিদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা বলেন, নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা এবং কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
সংলাপে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেতারা নির্বাচন কমিশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেতারারাষ্ট্রপতির সঙ্গে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নেতারা
তারা বলেন, ধর্মবিদ্বেষী, চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক, অবৈধ সম্পদের অধিকারী, সন্ত্রাসী, সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী, ঋণখেলাপির সঙ্গে জড়িত পরিবারবর্গকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
নেতারা নির্বাচন কমিশন কর্তৃক রাজনৈতিক দলগুলোর সকল কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার প্রস্তাবকে বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক করার প্রস্তাব দেন। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
নেতাদেরকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন যাতে গঠন করা যায়, সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সুচিন্তিত মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সকল রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দলকে জনকল্যাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।’ রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিবরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২০ ডিসেম্বর প্রথম দিনে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপে বসেন রাষ্ট্রপতি হামিদ। এ পর্যন্ত মোট ১১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সংলাপ হবে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সঙ্গে সন্ধ্যা ছয়টায় ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সন্ধ্যা সাতটায়।
৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় হবে জাতীয় পার্টি (জেপি) এর সঙ্গে সংলাপ এবং সন্ধ্যা সাতটায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশে সঙ্গে।
৬ জানুয়ারি গণফ্রন্টের সঙ্গে সন্ধ্যা ছয়টায় এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পাটির্র (এলডিপি)সঙ্গে সন্ধ্যা সাতটায় সংলাপের কথা রয়েছে।
এদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে আলোচনা হবে ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) এর সঙ্গে ওই দিন সন্ধ্যা সাতটায় সংলাপ হবে।
১০ জানুয়ারি রোজ সোমবার সংলাপ হবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)সঙ্গে সন্ধ্যা সাতটায়।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।
বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন, যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।