কাজিরবাজার ডেস্ক :
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন ইস্যুতে আজ সোমবার (২০ ডিসেম্বর) জাতীয় পার্টির (জাপা) সঙ্গে সংলাপে বসছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এদিন বিকাল ৪টায় বঙ্গভবনে এই সংলাপ শুরু হবে। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাপার সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির ধারাবাহিক সংলাপের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি সংলাপ করবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের কোভিড টেস্ট করে সংলাপে অংশ নিতে হবে।
জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সোমবার সংলাপে অংশ নেবেন।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আমরা সোমবার বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসবো। আমাদের ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি সংলাপে অংশ নেবে।’
জানা গেছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে ২০১৬ সালে যে সংলাপ হয়েছিল, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের খুব বেশি কড়াকড়ি আরোপ না হলেও এবার সীমিত সংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে সংলাপে আসার অনুরোধ করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণে স্বল্প সংখ্যক প্রতিনিধিদের সংলাপের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সোমবার শুরু হওয়া এই সংলাপ জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলতে পারে। বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, এখনও সব দলের সঙ্গে সংলাপের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। তবে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের (ইনু) সংলাপের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে। প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে।
জাসদের দফতর সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন জানান, ২২ ডিসেম্বর তাদের সংলাপের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের অনধিক সাত জন প্রতিনিধি নিয়ে সংলাপে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রতিনিধিদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করে নেগেটিভ ফলের ভিত্তিতে সংলাপে অংশ নিতে বলা হয়েছে বলে জানান সাজ্জাদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সংলাপের বিস্তারিত শিডিউল এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সোমবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক করবেন রাষ্ট্রপতি। আগামী ২২ ডিসেম্বর (বুধবার) জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। অন্য দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সময় এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হলে আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সংলাপ হবে। আগের বার ২০ জনেরও বেশি প্রতিনিধিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এবার সেটা সম্ভব হচ্ছে না। দলগুলো সর্বোচ্চ কতজন সদস্য নিয়ে আসতে পারবেন, সেটা চিঠিতে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে সার্চ কমিটি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। এতে হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি)সহ ২/৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক থাকবেন।
উল্লেখ্য, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন নিয়োগ দেবেন।
সংবিধান অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির হাতে। গেলো এক দশকে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে সর্বশেষ দুটি নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছিলেন।
সাংবিধানিক সংস্থা ইসির সদস্যদের নিয়োগে আইন করার কথা থাকলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তা হয়নি। এ নিয়োগ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিরোধী দলগুলোর সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে সরকারকে। অবশ্য এবার সরকারও ইসি গঠনে আইন প্রণয়নে তার ইতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়েছে। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, তারা সময়ের স্বল্পতার কারণে এবার আইন করতে পারছেন না। সার্চ কমিটির মাধ্যমেই এবারও ইসি গঠন করা হবে। চলমান একাদশ জাতীয় সংসদের আগামী দুটি অধিবেশনের মধ্যে তিনি ইসি গঠন সংক্রান্ত আইন সংসদে তুলনে পারবেন। এর খসড়া তৈরি করা হচ্ছে বলেও আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা রয়েছে। এ বিষয়ে প্রণীত কোনও আইনের বিধান সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন বলে সংবিধানে উল্লেখ রয়েঢছে।
কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি গঠনের আগে ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। একমাস ধরে ৩১টি দলের সঙ্গে চলা ওই সংলাপ ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি শেষ হয়। সার্চ কমিটি গঠন করার পর সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই কমিটির কাজের সাচিবিক দায়িত্বও থাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের হাতে।