বঙ্গোপসাগরের পারে সুন্দরবনের দুবলার চরে গড়ে উঠেছে বিশাল শুঁটকিপল্লী। লইট্টা, ছুরি, চিংড়ি, রূপচাঁদা, খলিসা, ইছা, ভেদা, পোঁয়াসহ অন্তত ১০০ প্রজাতির শুঁটকি তৈরি করা হয় এ পল্লীতে। বর্তমানে বাংলাদেশের শুঁটকি অর্থনীতির কেন্দ্র এটি। আর এই বিশাল শুঁটকি খাত নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। মৎস্য প্রযুক্তি ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের অধীনে এই গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দুবলার চরের শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ও শুঁটকি শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মানের উপর জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব পর্যালোচনা করা হবে এই গবেষণায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশীপের আওয়তায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য প্রযুক্তি ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আরিফ বিল্লাহ গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ‘সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এই দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড়ের মত প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঝুঁকিতে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কি শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এবং তার প্রভাব কতদূর বিস্তৃত হচ্ছে তাই মূলত পর্যালোচনা করা হবে এই গবেষণায়’।
গবেষণা কার্যক্রমটি সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন মৎস্য প্রযুক্তি ও মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মোতাহের হোসেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুবলার চরে অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে জেলেরা সাগর থেকে মাছ ধরে আনেন এবং তা শুঁটকি করেন। আমাদের এই গবেষণা কার্যক্রমের উদ্দেশ্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্লেষণ করা। একই সাথে দুবলার চরে উৎপাদিত শুঁটকির মান নিয়েও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্য রয়েছে আমাদের। জায়গাটি যেহেতু বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ, সেখানে গবেষণা করা সময়, অর্থ ও কষ্ট সাপেক্ষ। আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেছি। আগামীতে বড় পরিসরে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে’।
ইতিমধ্যে, ডিসেম্বরের ৯ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত সুন্দরবনে অবস্থান করে দুবলার চরের শুঁটকি পল্লী থেকে প্রাথমিক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও পরিদর্শন করেছেন গবেষণা দলের সদস্য মোঃ আরিফ বিল্লাহ ও ইফতেখার আহমেদ ফাগুন। পরিদর্শনকালে দ্বীপের শুঁটকি শ্রমিকদের সাথে তাদের নানা বিষয়ে আলাপচারিতা হয়।
প্রায় ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫০টি নদী-খাল রয়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদী ও খালে এখন জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরা পড়ছে।
প্রতি বছর আশ্বিন মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতের কাজ চলে। এবার শুঁটকি তৈরিতে তিন কোটি ২২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বন বিভাগ। গত মৌসুমে আহরিত হয়েছিল ৪৫ হাজার মেট্রিক টন এবং তা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে তিন কোটি ২২ লাখ টাকা।