শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

6

নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সিলেট-৩ আসনের হাবিবুর রহমান হাবিব ও ৫নং সিলাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ ওলিদুর রহমান ওলিদ এবং মেম্বার আলতাব হোসেনকে সংবর্ধনা প্রদান করছেন নেতৃবৃন্দ।ৃআজ শোকাবহ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতি আজ স্মরণ করছে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, যাদের হারিয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনালগ্ন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। একই সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করছে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের স্বজনদের প্রতি, যারা দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে বয়ে চলেছেন আপনজনকে নির্মমভাবে হারানোর মর্মন্তুদ বেদনা ও কষ্ট। এই হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দালালরা চেয়েছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যাতে এদেশে যথাযথভাবে বিকশিত না হয়। যুদ্ধের শুরু থেকেই হানাদার বাহিনী যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের সূচনা করেছিল, শেষদিকে এসে পরাজয়ের আগ মুহূর্তে তা রূপ নেয় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পরিকল্পিত হত্যাকান্ডে। হানাদাররা তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকারদের সহযোগিতায় বেছে বেছে হত্যা করেছিল শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের। পরাজয় নিশ্চিত জেনে তারা চেয়েছিল স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়া দেশটিকে মেধায়-মননে পঙ্গু করতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এদেশের কিছু কুলাঙ্গারই বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুদ্ধিজীবীদের ধরে এনে তুলে দিয়েছে পাকিস্তানী ঘাতক বাহিনীর হাতে। কোন কোন ক্ষেত্রে নিজেরাই হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন করেছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, সেসব বিশ্বাসঘাতক নরাধমের অনেকেই পঁচাত্তর পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজে পুনর্বাসিত হয়েছে। কেউ কেউ এমনকি মন্ত্রী হয়ে গাড়িতে উড়িয়েছে বাংলাদেশের পতাকা। পাকিস্তানী দুঃশাসনের দিনগুলোতে বরেণ্য সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন জাতির বিবেক।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার বিচারের দাবি ওঠে স্বাধীনতার পরপরই। বিচারকাজও চলছিল। কিন্তু ’৭৫ পরবর্তী শাসকরা বিচার দূরে থাক, খুনীদের প্রতিষ্ঠিত করেছে সর্বত্র। শেখ হাসিনা প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরই বিচারকাজ শুরু করেন নির্বাচনী অঙ্গীকারও সামনে রেখে। একাত্তরে যারা হত্যাযজ্ঞ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনে জড়িত ছিল, তাদের বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সমাপ্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ, নিজামী, মীর কাশেম আলীর মতো ঘাতকদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকা- একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধগুলোর মধ্যে ঘৃণ্যতম। এসব হত্যাযজ্ঞে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন সম্ভব।