দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রীকে। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসানের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করেছেন তিনি। এ জন্য তিনি দল বা সরকারের ক্ষতির কথাও বিবেচনায় আনেননি। অতীতেও তিনি এমন সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলীয় চিন্তার গন্ডিতে না থেকে তাঁর এসব সাহসী সিদ্ধান্ত শুধু প্রশংসিতই হয়নি, দল এবং রাষ্ট্রের উপকারও হয়েছে। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল রাজনৈতিক দল। সারাদেশে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত দলের শিকড় বিস্তৃত। এই দলের সবাই শতভাগ ভাল হবেন এমন দাবি করাও উচিত নয়। তবে দলের কোন খারাপ মানুষকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না, এই প্রত্যাশা সবার। কোন রাজনৈতিক দল যদি প্রমাণিত নীতি-নৈতিকতা হারানো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তবে তা নিন্দনীয়। রাজনৈতিক নেতারা জনগণের মঙ্গলে নিয়োজিত থাকবেন, এটিই স্বাভাবিক। যদি কোন নেতার নৈতিক স্খলন হয়, তবে অবশ্যই তাকে কেউ বিশ্বাস করবে না। তাকে দল থেকে ছেঁটে ফেলাই যৌক্তিক।
মুরাদ হাসান একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার বাবা মতিউর রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের অনুসারী। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা, রাজনীতিতে তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা, মানুষের জন্য তাঁর অসাধারণ ভালবাসা জামালপুর এলাকায় ইতিহাস হয়ে রয়েছে। এমন পিতার জীবনাদর্শে বড় হয়ে মুরাদ হাসান নীতি-নৈতিকতাসম্পন্ন মানুষ হবেন, এটিই ছিল সবার প্রত্যাশা। এ কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর আসনে দল থেকে তাকে মনোনয়ন দিয়েছিল আওয়ামী লীগ, তাকে প্রথমে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এবং পরে সেখান থেকে সরিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয়। তিনি দলীয় প্রধানের সেই আস্থা ও বিশ্বাসের মূল্য দিতে পারেননি।
গত কয়েক দিনে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার যেসব কথাবার্তা এবং আচরণ প্রকাশ পেয়েছে, তাতে একজন মন্ত্রী তো নয়ই, স্বাভাবিক মানুষ মনে হয়নি। দলের কথা না ভেবে, সরকারের ভাবমূর্তির কথা চিন্তা না করে তিনি যে আচরণ করেছেন, সেটা সত্যিই বিস্ময়কর। বিষয়গুলো জানতে পেরে প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটিই প্রত্যাশিত ছিল। এক সময় দলীয় রাজনীতিতে যাদের অপরিহার্য মনে হয়েছে কিন্তু যখন তাদের নৈতিকতার স্খলন কিংবা দুর্নীতগ্রস্ত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে, তাদের দল থেকে ছেঁটে ফেলতে প্রধানমন্ত্রী একবারও ভাবেননি। নীতির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর এই কঠোরতাই তাঁকে এতটা উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমন একজন মানুষকে রাষ্ট্রের কর্ণধার হিসেবে পাওয়ায় বাংলার মানুষ নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। মন খুলে বলতে পারেন, ‘পথ হারাবে না বাংলাদেশ।’