করোনা অতিমারীর কারণে বিজয়ের মাসটি গত দু’বছর ধরে প্রায় অনাড়ম্বরভাবে সীমিত পরিসরে পালিত হলেও বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জীবনে দিনটি চির অমলীন ও অবিস্মরণীয়। এবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের ৫০ বছর তথা সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিজয়ের মাসটি জাঁকজমকের সঙ্গে মহাআড়ম্বরে পালিত হবে বলেই প্রত্যাশা। ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় ইতিহাসের উজ্জ্বলতম একটি মাস। এটি আমাদের বিজয়ের মাস। নয় মাসের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে গৌরবজনক বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। এই স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজি রেখে হানাদার পাকিস্তানী সেনা বাহিনীকে তাড়িয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করার শপথ নিয়েছিল দেশের বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা। বিজয়ের মাসের সূচনার প্রথম দিনটিকে মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে পালনের উদ্যোগ নেয়া হয় কয়েক বছর আগে। দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই উদ্যোগ নেন। একটা সময় গেছে যখন মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানানো হতো না। এজন্য বিভিন্ন কূটকৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল।
একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে। সুদীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রামের পথ বেয়ে এমন এক সময় এসেছিল যেটা ছিল ঐ আন্দোলন-সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়। প্রাথমিক পর্যায়ের সূচনাপর্বের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের পর সংগ্রামের ধারাটি স্রোতের মতো বাহিত হয়ে পৌঁছেছিল একাত্তরে। এই পথের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন। এসব আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে রয়েছে এদেশের মানুষের বহু ত্যাগ, বহু অশ্রু, অনেক জীবনদানের ঘটনা। ছয় দফার আন্দোলনের সঙ্গে এক পর্যায়ে যুক্ত হয় এগারো দফার আন্দোলন। আসে ১৯৭০ সাল। সে বছর অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন এবং সে নির্বাচনে দেশের মানুষের বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের ঘটনা ঘটে। তারপর একাত্তরের মার্চ। ১ মার্চ। এলো ৭ মার্চ। সেদিনের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ এবং তাতে সুস্পষ্ট ঘোষণা- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এলো ২৫ মার্চ। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সুপরিকল্পিত সশস্ত্র আক্রমণ, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো পাকিস্তানে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো সশস্ত্র প্রতিরোধ, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ।
এই যুদ্ধে রুখে দাঁড়াল এ দেশের বীর বাঙালি সন্তানরা। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর আহবানে, তাঁর নামে হাতে তুলে নেন অস্ত্র। ঝাঁপিয়ে পড়েন দেশ থেকে শত্রু বিতাড়নের শপথ নিয়ে। নয় মাসের যুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এলো ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ। নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করল পাক হানাদাররা ঢাকা মহানগরীর রেসকোর্স তথা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। দেশ হলো শত্রুমুক্ত।