স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটে টানা তৃতীয়বারের মতো পিছিয়েছে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। আগের দুই তারিখের মতো সোমবার (২২ নভেম্বর) সাক্ষ্যগ্রহণের নির্ধারিত তারিখেও কোনো কোনো সাক্ষী উপস্থিত হননি। সিলেট সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল আমিন বিপ্লবের আদালতে এই মামলার বিচারকাজ চলছে।
সোমবার চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক আরমান আলী এবং সিআইডির আইটি ফরেনসিক বিভাগের উপ-পরিদর্শক মাসুদ সিদ্দিকীর স্ক্ষ্যাগ্রহণের কথা ছিলো। এরআগে গত ৮ নভেম্বর এবং ২৭ অক্টোবরও এই দুই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের নির্ধারিত তারিখ ছিলো। কিন্তু তারা হাজির না হওয়ায় পিছিয়ে যায় সাক্ষ্যগ্রহণ।
এদিকে, বারবার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পিছিয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাদি পক্ষের স্বজনরা।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মনির উদ্দিন জানান, মামলার ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ দুজন সাক্ষী কয়েকটি নির্ধারিত দিনে সাক্ষ্য দিতে আদালত হাজির না হওয়া সাক্ষ্যগ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে।’ তিনি জানান, সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি। পরবর্তীতে নির্ধারণ করবেন বিচারক।
সাক্ষীরা না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অনন্ত বিজয়ের বোন জামাই সমর বিজয় শী বলেন, ‘করোনা মহামারিতে অনেক পিছিয়ে গেছে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। এখন স্বাভাবিক আদালত কার্যক্রমের মধ্যেও গত মাস ও চলতি মাসে দুদিন সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়েছে। ডিসেম্বর মাসে আদালত বন্ধ থাকবে। ফলে এবছর আর বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।’
২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নুরানি আবাসিক এলাকায় নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অনন্ত। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে অনন্ত সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের দিন রাতে অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা ৪জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
এরপর মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তরিত হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪), কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) এবং সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)।
আসামিদের মধ্যে ফারাবী বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার রায়ে দন্ডপ্রাপ্ত আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আসামিদের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক আছেন।