নিয়োগ পরীক্ষায় নতুন মাত্রা

6

করোনার মহাদুর্বিপাকে গত দেড় বছরে সরঞ্জাম নিয়োগ পরীক্ষাসমূহের ওপর যে কঠিন জাল বিস্তার হয়, তা ক্রমেই খুলছে। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক নিয়োগ পরীক্ষাগুলো গতি ফিরে পাচ্ছে। আগ্রহী এবং যোগ্যপ্রার্থীরা আবেদনপত্র পূরণ করে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেয়াও জীবনের অপরিহার্য কর্মবিধি। তেমন কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরুও হয়েছে। দীর্ঘদিনের জড়তা কাটাতে সময় লাগছে প্রচুর। কিছু বিপত্তিও সংশ্লিষ্টদের বিপন্ন করে তুলছে। এতদিন প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে অনেক নিয়োগ পরীক্ষা তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করার চিত্রও উঠে আসছে। নিয়োগ পরীক্ষার্থীরা সেখানেই পড়ে যাচ্ছে এক অসহনীয় অবস্থায়। বিভিন্ন পরীক্ষার দিনক্ষণের সময়ের তারতম্য না থাকায় একই দিনে অনেক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে দেখা যাচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্টরা অনেক পরীক্ষায় আবেদনপত্র জমা দিয়েও সব জায়গায় অংশ গ্রহণ করতে পারছেন না। আবেদনপত্র জমা দিতেও অর্থব্যয় প্রাসঙ্গিক ব্যাপার। পরীক্ষার্থীরা সব পরীক্ষায় সফলও হয় না। ধারাবাহিক কয়েকটা পরীক্ষা দিয়ে কোন একটিতে সুযোগ পেয়ে যায়। কিছু পরীক্ষার্থী বিভিন্ন পেশায় মেধা ও মনন যাচাইয়ে যোগ্য প্রমাণিত হয়। সেখানে কাজের জায়গাটি পছন্দ করার সুযোগও থাকে। ফলে পছন্দসই পেশা নির্ধারণ করতেও নিয়োগ প্রার্থীরা ভাবতে পারে। সঙ্গত কারণেই আকাক্সিক্ষত কর্ম জগতও তার জন্য উন্মুক্ত হয়। কিন্তু এবার ব্যতিক্রমী চিত্র নিয়োগ প্রার্থীদের হতাশ ও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে উঠে আসে মন্ত্রণালয়ের আদেশ কিংবা নির্দেশ না মানার দুঃসহ চিত্র। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতায় চরম গাফিলতি পরিস্থিতিকে সংশ্লিষ্টদের হাতের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে একক কোন সংস্থা দায়ভার না নিলে নিয়োগ পরীক্ষায় সমন্বয় করা আসলেই অসম্ভব। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকেও এমন বার্তা পাওয়া যায়। পরীক্ষাগুলো নেয়া হয় মূলত শুক্রবার ছুটির দিনে। ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ১৯ প্রতিষ্ঠানের একই দিনে নিয়োগ পরীক্ষা। ফলে সংশ্লিষ্টদের দুর্ভোগ-দুরবস্থ সহজেই অনুমেয়।
গত দুই মাস ধরে প্রতি শুক্রবার গড়ে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে একই দিনে। প্রত্যাশী প্রার্থীরা আবেদনপত্র জমা দিতে টাকা খরচ করার পরও সব পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। ফলে চাকরি প্রার্থীরা ক্ষুব্ধ এবং মর্মাহত। মেধা ও মনন যাচাইয়ের প্রতিযোগিতায় নেমে নিজেদের প্রমাণ করতে হয় যোগ্যপ্রার্থী হিসেবে। সেখানে কয়েকটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারলে কোন ধরনের আশঙ্কা তৈরি হয় না। কিন্তু পরীক্ষায় বসার সুযোগই যদি সঙ্কুচিত হয়ে যায় তা হলে বিড়ম্বনায় পড়ে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীরা। ছুটির দিন শুক্রবার ছাড়া নিয়োগ পরীক্ষা নেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। সমস্যা খতিয়ে দেখে সমাধানের পথ নির্দেশ করা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। নিয়োগ প্রার্থীদের অর্থ, শ্রম ও সময় নষ্ট করাও কোন মানবিক বিবেচনার পর্যায়ে পড়ে না। কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার দায় কেন ভোগ করবেন নিয়োগ প্রার্থীরা? বরং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই সচেতন দায়বদ্ধতায় সুষ্ঠু সমন্বয়ে নিয়োগ পরীক্ষাকে নতুন মাত্রা দেয়া বর্তমান পরিস্থিতির অনিবার্য দাবি।