হোটেল মালিক ও কর্মচারীদের রাস্তা অবরোধ, রেস্টুরেন্ট বন্ধের ডাক ॥ ভোজনবাড়িকে সিলগালা, পাঁচভাই ও পানসী রেস্টুরেন্টকে বড় অংকের টাকা জরিমানা

12
ভোজন বাড়ি রেস্টুরেন্টে র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে বিভিন্ন অনিয়মের ভিত্তিতে সিলগালা ও দুই কর্মচারীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে জিন্দাবাজার পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে সিলেট হোটেল মালিক শ্রমিক নেতাকর্মীরা। ছবি- মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার :
পচা ও বাসি খাবার পরিবেশন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের দায়ে নগরীর জিন্দাবাজারে পানসী ও পাঁচভাই রেস্টুরেন্টকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৯ পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতে অভিযানে এই ২ রেস্টুরেন্টকে বিপুল অংকের টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগে একই অভিযানে ওই এলাকারই ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্টকে সিলগালা করে ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় ভোজনবাড়ি থেকে দুজনকে আটকও করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা থেকে আসা র‌্যাবের বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসুর নেতৃত্বে নগরীর জনপ্রিয় এই তিনটি রেস্টুরেন্টে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এর প্রতিবাদে রেস্টুরেন্ট মালিক ও কর্মচারীরা জিন্দাবাজার সড়ক অবরোধ করে রেস্টুরেন্ট বন্ধ ঘোষণার ডাক দেন।
অভিযানে পানসী ও পাঁচভাই দুই রেস্টুরেন্টেই মেয়াদোত্তীর্ন ও বাসি খাবার এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার পরিবেশনের প্রমাণ পায় ভ্রাম্যমান আদালত। ফলে দুই রেস্টুরেন্টকে ৮০ হাজার টাকা করে মোট ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগে বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে ভোজনভাড়ি রেস্টুরেন্টে অভিযান শুরু করে র‌্যাব-৯। এসময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন।
অভিযান শেষে ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এখানে অভিযানে এসে আমরা

ভোজন বাড়ি রেস্টুরেন্টে র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে বিভিন্ন অনিয়মের ভিত্তিতে দুই কর্মচারীকে আটক করা। (ইনসেটে) সিলগালা ভোজন বাড়ি

খাদ্যের মানে ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছি। তাছাড়া ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে তাদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন নেই, খাবার পরিবেশনের বৈধ কাগজপত্র নেই। সকল কিছু মিলে আমরা সাময়িক সময়ের জন্য রেস্টুরেন্টটি বন্ধ করে তাদেরকে সময় দিয়েছি। আপাতত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রেস্টুরেন্টের দুইজনকে আমাদের সাথে নিয়ে যাচ্ছি। আটককৃত একজন রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ও অপরজন সুপারভাইজার।
পলাশ কুমার বসু জানান, এসব রেস্টুরেন্টে পূর্বে একাধিকবার অভিযান চালালেও কোন কাজ হয়নি। তিনি জানান, অভিযানে রেস্টুরেন্টগুলোতে এমন অনেক খাদ্য পেয়েছি যেগুলো দুই থেকে তিন দিন আগের।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ৩টি রেস্টুরেন্টে ভ্রাম্যামান আদালতের অভিযানের প্রতিবাদে জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়ক অবরোধ করেন রেস্টুরেন্ট মালিক-শ্রমিকরা। বিকেল পৌনে ৫ টা থেকে পৌনে ৬ টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় জিন্দাবাজার সড়কের চারপাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রশাসনের আশ্বাসে পৌণে ৬ টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে যান মালিক-শ্রমিকরা।
সিলেট ক্যাটারার্স ওনার্স এসোসিয়েশন সভাপতি শান্ত দেব জানান, গতকাল মঙ্গলবার র‌্যাবের একটি ভ্রাম্যমান আদালত নগরীর জিন্দাবাজারস্থ ভোজনবাড়ি, পাঁচভাই ও পানসী রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায়। এসময় ভোজনবাড়ি রেস্টুরেন্ট সিলগালা করে ম্যানেজার ও সুপারভাইজারকে আটক করে নিয়ে যায়। এছাড়া পাঁচভাই ও পানসী রেস্টুরেন্টকে ৮০ হাজার টাকা করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। শান্ত দেব বলেন, লকডাউন পরবর্তী সময়ে এখনো রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এর মধ্যে রয়েছে ভ্যাট ও ট্যাক্সের বোঝা। রেস্টুরেন্ট ব্যবসা যখন ধুঁকছে তখন অভিযানের নামে রেস্টুরেন্ট মালিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। কোন রেস্টুরেন্টে সমস্যা থাকলে জরিমানা হতে পারে। কিন্তু সিলগালা করার বিধান নেই। এতে বোঝা যায় রেস্টুরেন্ট মালিকদের হয়রানি করতে এরকম অভিযান করা হচ্ছে। শান্ত দেব জানান, অভিযান বন্ধ, সিলগালাকৃত রেস্টুরেন্ট খুলে দেয়া ও আটক কর্মচারীদের মুক্তির দাবিতে আজ বুধবার থেকে সিলেটের সকল রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলতে থাকবে। এছাড়া বুধবার সকালে রেস্টুরেন্ট মালিক ও কর্মচারীরা শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানাবে। তিনি জানান, রেস্টুরেন্ট ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলে এর সাথে জড়িত সিলেটের হাজারো মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন।
এর আগে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির হলরুমে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট চেম্বারের সভাপতি এটিএম শোয়েব এবং সিলেট রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি ও সিলেট ক্যাটারার্স ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায়ও বুধবার থেকে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।