কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এবার আমরা নির্বাচন নয়, সরকারের পতন নিয়ে চিন্তা করছি। এই সরকারকে চলে যেতে হবে। তাদের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নির্বাচন হতে হবে। এটাই, ফাইনাল।
বুধবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, এসব সহিংসতার সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত নয়। মামলার উদ্দেশ্যে হচ্ছে, বিএনপিকে হয়রানি করা, তাদেরকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা। যেহেতু আসন্ন নির্বাচন তারা করতে চায়, তাই নির্বাচনের পূর্বেই যেন বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া যায়। এভাবে তারা রাজনীতিতে টিকে থাকতে চায়।
দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন
দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার দায়েরে ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মন্দির ভাঙ্গা বিষয়ে মোট মামলা হয়েছে ৬০টা। আসামি সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৬ জন। আপনারা যারা গণমাধ্যমে কাজ করেন তারা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন এই ঘটনার পেছনে সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ আছে। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, ক্ষমতায় টিকে থাকতে জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে সরকার। আমাদের দলের উচ্চ পর্যায়ের টিম সরেজমিন ঘটনাস্থল দেখে এসেছেন।
বরকত উল্লাহ বুলুসহ যাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে এরা কেউ এর (পূজামণ্ডপের হামলা ঘটনা) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না।
তিনি বলেন, বুলুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও নির্যাতন করে ১৬৪ ধারায় যে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে-এটা একটা মিথ্যা প্রয়াস। অবিলম্বে এসব মামলা প্রত্যাহার চাই এবং প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করার দাবি জানাই। আমরা সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি, আমাদের গঠনতন্ত্রের মধ্যে সেটা আছে। খালেদা জিয়াও বার বার বলেছেন, ধর্ম যার যার, এই রাষ্ট্রটা সবার। তিনি কখনোই সংখ্যালঘু শব্দটা ব্যবহার করেন না।
ফখরুল বলেন, এটা খুব পরিষ্কার, সরকার পরিকল্পিতভাবে মাঠ পরিষ্কার করার কাজ করছে। ২০১৮ সালেও আপনারা দেখেছেন, নির্বাচনের কয়েকদিন আগে থেকে প্রত্যেকটি সংসদীয় আসনে তারা (সরকার) মিথ্যা, গায়েবি মামলা শুরু করেছিল। প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে, মাঠ একদম খালি করা হয়। এবার তার আগে থেকেই মামলাগুলো দিচ্ছে। সরকার অতিদ্রুত মামলাগুলো শেষ করতে চায়। বিশেষ করে আমাদের যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। তারা (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) তালিকা তৈরি করেছে। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করবে, যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি।
তিনি দাবি করেন, এবার দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে প্রতিটি ঘটনার পেছনে সরকারি দলের ইন্ধন ছিল। রংপুরের যে ঘটনা ঘটেছে সেখানে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা সৈকত ও রেজাউল তারাই এই ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। তারা ঘটনার সূত্রপাত ঘটাল, এরপর দেখা গেল মামলায় অনেক বিএনপির নেতা-কর্মীর নাম দিয়ে দিয়েছে। রংপুরে চারটি মামলায় ৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে। বিএনপির অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কুমিল্লাতে পাগল ইকবাল বলে একজনকে সাজিয়েছে। সে নাকি পবিত্র কুরআন শরিফ নিয়ে মণ্ডপে রেখেছে এবং সেখান থেকে মসজিদে গেছে। যেগুলো কোনোমতেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এটা অত্যন্ত পরিকল্পিত ঘটনা। আমি প্রথম দিনই বলেছিলাম, সরকারের এজেন্সিগুলো এ পরিকল্পনা করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণের যে সমস্যা সংকট, অর্থাৎ ভাতের সংকট, ভোটের সংকট, বাকস্বাধীনতার সংকট, তার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধির যে সংকট সেই সংকট থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার জন্যই এই ঘটনা ঘটিয়ে মামলাগুলো দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লার ঘটনায় ইকবালের ভিডিও চিত্র প্রকাশের পরও সেটি কেন বিএনপির কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, কী কারণে বিশ্বাস করব? কুমিল্লার ঘটনার ব্যাপারে সেখানে যারা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, তারা আগেই বলেছেন এবং ভিডিওতে বলেছেন যে এটা আসলে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নিজস্ব দ্বন্দ্ব। সেখানে দুটো গ্রুপ আছে, সে গ্রুপের দ্বন্দ্বের ফলে এ ঘটনাগুলো ঘটেছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনায় যে ইকবালকে পাওয়া গেছে, তা বিশ্বাসযোগ্য না এই কারণে সরকারই একবার বলে উন্মাদ, ভবঘুরে, পাগল। ইকবাল যতটা না পাগল, তার চেয়ে বেশি পাগল হলো সরকার। পাগল দিয়ে যদি এমন একটা দুর্ঘটনাকে এড়িয়ে যায়, বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর চাপিয়ে পার পাওয়া যায়, তারা সে চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু সে পাগলামিটা তো বিশ্বাসযোগ্য না।
চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের পিলারে ফাটল ও পাটুরিয়ায় ফেরি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকারের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও নজরদারির অভাবে এসব ঘটনা ঘটছে।