পথশিশুদের কল্যাণে পদক্ষেপ নিন

20

‘একটি শিশুও রাস্তায় থাকবে না, রাস্তায় ঘুমাবে না’ এমন এক প্রত্যাশার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এই প্রত্যাশা পূরণে এর মধ্যে অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অনেক শিশু ফিরেছে ঘরে, পেয়েছে শিক্ষার আলো। আসছে আরও উদ্যোগ। এবার পথশিশুদের নেয়া হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায়। পথ থেকে ফেরাতে পথশিশুদের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া শেখানো হবে। কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করবে শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট। শেখ রাসেল দিবসকে কেন্দ্র করে নেয়া হয়েছে এই মহতী উদ্যোগ।
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়, ‘পথশিশুদের পুনর্বাসন ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হবে শিশুসদন।’ এর বাইরেও শিশুদের জন্য রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ মমতা। সরকারী কর্মসূচীর বাইরেও কত ছিন্নমূল শিশুকে তিনি লেখাপড়া শিখিয়ে মানবিক জীবন দিয়েছেন, তার হিসাব কেউ জানে না। ব্যক্তিগত জীবনে দরিদ্র ছিন্নমূল শিশুদের দেখলেই রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে তাদের সাহায্য করতেন, সম্ভব হলে তার দায়িত্ব তুলে নিতেন নিজ কাঁধে।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার একাধিক প্রকল্প চলছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে। নতুন এই সিদ্ধান্তও তারাই বাস্তবায়ন করবে। শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট ঢাকা বিভাগে ৬৫টি, বরিশাল বিভাগে ২৫টি, চট্টগ্রামে ১১টি, সিলেটে ৫টি, রাজশাহী ২২টি, রংপুর ৪৭টি, খুলনা বিভাগে ১৬টি ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১৪টিসহ সারাদেশে ২০৫টি শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া করানো হয়। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময়ের পর ৮৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং ট্রাস্টের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ৭৩টি বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করানো হয়। বাকি ৪৯টি বিদ্যালয় পরিচালিত হয় ভাড়া করা ভবনে।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আরও একটি প্রকল্প চালাচ্ছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শিশু একাডেমির মাধ্যমে ৬৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে তারা এই প্রকল্প পরিচালনা করছে। বাবা-মা নেই এমন এতিম শিশুদের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিচালনা করছে ‘সরকারী শিশু পরিবার’ নামে একটি উদ্যোগ। পরিত্যক্ত এবং পাচার থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুদের এই প্রতিষ্ঠানে লালনপালন ও সাধারণ শিক্ষা দেয়া হয়। নানা পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, দেশে আশ্রয়হীন পথশিশুর সংখ্যা ১৫/ ১৬ লাখ। তারা শুধু আশ্রয়হীন নয়, শিক্ষাসহ সকল রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। আশ্রয় ও অভিভাবকহীন শিশুরা শিক্ষা ও সঠিক পরিচর্যার অভাবে বড় হয়ে বিপথে পরিচালিত হয়। বেশিভাগই হয়ে ওঠে অপরাধী। এসব শিশুর সঠিক পরিচর্যা এবং শিক্ষায় লালন করতে পারলে দেশের একটি বড় জনগোষ্ঠী সঠিক পথে ফিরে আসবে। কমবে সামাজিক অপরাধ। বাড়বে দক্ষ জনবল। সকল পথশিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় নেয়ার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত সরকারের এই কর্মসূচীকে আরও বেগবান করবে।