কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়ে বলেছেন, আমরা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে চাই এবং এ ব্যাপারে রাশিয়ার অব্যাহত সহযোগিতা প্রয়োজন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ সোমবার তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের ফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌজন্য সাক্ষাতে আসা রোসাটমের মহাপরিচালককে স্থানীয় জনগণকে প্রশিক্ষণ দেয়ার আহ্বান জানান, যাতে তারা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আরএনপিপি) চালাতে পারে।
এ সময় আলেক্সি লিখাচেভ বলেন, বাংলাদেশ এবং রাশিয়ার পারস্পরিক সহযোগিতা পারমাণবিক ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে এবং ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত হবে। তিনি বলেন, আরএনপিপি পরিচালনার জন্য তারা বাংলাদেশীদের প্রশিক্ষণ দিবেন এবং বাংলাদেশের বিদ্যুত খাতে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
রোসাটমের মহাপরিচালক স্থানীয় কর্মীদের প্রশংসা করে বলেন, ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান এবং অন্যান্য জনবলসহ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ আরএনপিপিতে কাজ করে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। তিনি বলেন, অনেক বাংলাদেশী কোম্পানিও সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করছে।
আলেক্সি লিখাচেভ এ সময় আরএনপিপি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পরমাণু কমিশনের সহযোগিতার প্রশংসা করে বলেছেন, বাস্তবায়নের সময় সমন্বয় করা যেতে পারে। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, আরএনপিপির নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিবেন এবং তারা প্লান্টের কাছাকাছি এলাকায় সামাজিক উন্নয়নেও কাজ করছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সামনে আরএনপিপির কারিগরি ও নিরাপত্তার দিকগুলোও উপস্থাপন করেন। আলেক্সি লিখাচেভ আরএনপিপি বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন।
সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন রাশিয়ান ফেডারেশনের সমর্থনের কথাও স্মরণ করেন। তিনি রোসাটমের মহাপরিচালককে আরও বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী বাংলাদেশের অগ্রগতি কিছুটা থামিয়ে দিয়েছে, কিন্তু এখন তা কাটিয়ে উঠে এগিয়ে যাচ্ছে।
এ সময় আলেক্সি লিখাচেভ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আরএনপিপিতে কর্মরত ৯০ শতাংশের বেশি রাশিয়ান নাগরিক তারা টিকা দিয়েছেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, এ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব জিয়াউল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পাবনার রূপপুরে রাশিয়ার কারিগরি এবং আর্থিক সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন রোসাটম এ সহযোগিতা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের (আরএনপিপি) মূল যন্ত্র রিএ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের কাজের উদ্বোধন করেছেন। যা রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করছে। আরএনপিপির মূল ইউনিটে রিএ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের ফলে বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি উৎপাদনের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে চলেছে। রোসাটম মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
