কাজিরবাজার ডেস্ক :
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেমগুলো বন্ধের রুলে পক্ষভুক্ত হতে হাইকোর্টে আবেদন করেছে সিঙ্গাপুরের গেম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্যারিনা অনলাইন প্রাইভেট লিমিটেড। অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম বন্ধের রিটে পক্ষভুক্ত হতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে তারা এ আবেদন করে।
রবিবার (১০ অক্টোবর) এ বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য ২৬ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন।
রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হুমায়ন কবির পল্লব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিন আদালতে গ্যারিনার পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জুনায়েদ আহমেদ চৌধুরী ও তানভীর কাদের। রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গোলাম সরোয়ার পায়েল। এছাড়া বিটিআরসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব।
ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব জানান, অনলাইনে ফ্রি ফায়ার গেমসের প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের গ্যারিনা অনলাইন প্রাইভেট লিমিটেডের একজন প্রতিনিধি রিটের পক্ষভুক্ত হয়ে আবেদন করেছেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হলেন রাজশাহীর মীর রাসেল আহমেদ।
রিটকারী আইনজীবী জানান, শুনানিতে অনলাইনে ফ্রি ফায়ার গেমস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে যে ব্যবসা করছে তার অনুমতি আছে কি না, তারা লাইসেন্স করেছিল কি না, ট্যাক্স ও ভ্যাট দিচ্ছে কি না, আইনগত কী ভিত্তি রয়েছে, সেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, গ্যারিনা আইনগতভাবে কতো টাকা ব্যবসা করেছে, ট্রানজেকশন-ট্যাক্স কত, ভ্যাট ঠিক মতো পরিশোধ হচ্ছে কি-না, এসব নথিপত্র নিয়ে রিট মামলায় পক্ষভুক্ত হতে হবে।
রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ আগস্ট সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে টিকটক, লাইকি, বিগো লাইভসহ ‘ক্ষতিকর’ অ্যাপ ও গেম বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ।
এর আগে গত ২৪ জুন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মানবাধিকার সংগঠন ‘ল অ্যান্ড লাইফ’ ফাউন্ডেশনের পক্ষে গেম এবং অ্যাপগুলোর ক্ষতিকারক দিক তুলে জনস্বার্থে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব ও মোহাম্মদ কাউছার। রিটে দেশের অনলাইন প্লাটফর্মগুলো থেকে টিকটক, বিগো লাইভ, পাবজি, ফ্রি ফায়ার ও লাইকির মতো অনলাইন গেম এবং অ্যাপ বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
একইসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান, শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (ডিজি), বাংলাদেশ ব্যাংক, মোবাইল অপারেটর, বিকাশ ও নগদকে বিবাদী করা হয় রিটে।
এর আগে গত ১৯ জুন এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পেয়েও কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ রিট করা হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের মতো গেমে বাংলাদেশের যুব সমাজ এবং শিশু-কিশোররা ব্যাপকভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে সামাজিক মূল্যবোধ, শিক্ষা, সংস্কৃতি বিনষ্ট হচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়ে পড়ছে মেধাহীন। এসব গেম যুব সমাজকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, টিকটক, লাইকি অ্যাপ ব্যবহার করে দেশের শিশু-কিশোর এবং যুব সমাজ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি নারী পাচারের ঘটনা এবং বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে অর্থপাচারের ঘটনায়ও টিকটক, লাইকি ও বিগো লাইভের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক এবং দেশের ও জনস্বার্থ পরিপন্থি। এটা শৃঙ্খলা ও মূল্যবোধেরও পরিপন্থি।
রিটে বলা হয়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিধান অনুযায়ী এসব অবাঞ্ছিত ক্ষতিকর গেম এবং অ্যাপসকে অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে সরিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর এবং উপযোগী সাইবার পদ্ধতি সুনিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বিবাদীদের, যেটা করতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন।
দেশের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকটক, বিগো লাইভ, পাবজি, ফ্রি ফায়ার গেম ও লাইকির মতো সব অনলাইন গেম ও অ্যাপ বন্ধে সরকারকে নির্দেশনা দিতে আর্জি জানানো হয় রিটে।
রিট আবেদনের দিন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার পল্লব বলেছিলেন, এর আগে নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। নোটিশে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এগুলো বন্ধের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।
সেই রিটের রুল শুনানিতে অংশ নিতেই হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছে সিঙ্গাপুরের গ্যারিনা অনলাইন প্রাইভেট লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানটির আবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রি ফায়ার গেমের অসংখ্য প্লেয়ার বাংলাদেশে রয়েছে। আদালতের আদেশে ফ্রি ফায়ার গেম এর লিংক ব্লক করে দেওয়ার কারণে গ্যারিনা অনলাইন প্রাইভেট লিমিটেড ব্যবসায়িকভাবে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দেশের অনলাইন প্লাটফর্মগুলো থেকে টিকটক, বিগো লাইভ, পাবজি, ফ্রি ফায়ার ও লাইকির মতো অনলাইন গেম ও অ্যাপ বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর হাইকোর্টে পৃথক রিট দায়ের করেছিলেন আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন। সে রিট আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় অপেক্ষমান রয়েছে।