মূল পরিকল্পনাকারী সহ তিন জন গ্রেফতার ॥ ক্রাইম প্যাট্রোল দেখে ওসমানীনগরে ব্যাংকের এটিএম বুথে তারা ডাকাতি করে

11
ওসমানীনগরে ব্যাংকের এটিএম বুথে ডাকাতির ঘটনায় আটককৃতরা ও উদ্ধারকৃত লুণ্ঠিত টাকা, ব্যবহৃত চাকু এবং মোবাইল।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ওসমানীনগর থানা এলাকার ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এটিএম মেশিনের লক ভেঙে ২৪ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। জুয়ার টাকা জোগাড় করতে ভারতের অন্যতম ক্রাইম মেগা সিরিয়াল ‘সিআইডি’ দেখে ডাকাতির পরিকল্পনা করে চক্রটি। ২৪ লাখ টাকার মধ্যে ১৪ লাখ টাকা তারা উড়িয়ে দেয় জুয়া খেলে। এই ডাকাতির সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার তিনজন হলেন চক্রের মূলহোতা মো. শামীম আহাম্মেদ, নূর মোহাম্মদ সেবুল ও আব্দুল হালিম। তাদের মধ্যে শামীম আহাম্মেদ দীর্ঘদিন ওমান প্রবাসী ছিলেন, নূর মোহাম্মদ আগে দর্জির কাজ করেন, আর আব্দুল হালিম চায়ের দোকানদার।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবি উত্তরের যুগ্ম-কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।
মঙ্গলবার ধারাবাহিক অভিযানে রাজধানী ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত ১০ লাখ আট হাজার টাকা, দুটি মোবাইল ফোন, একটি ছুরি, একটি প্লাস ও মাথায় ব্যবহৃত তিনটি কাপড়ের টুকরা জব্দ করা হয়।
ডিবি উত্তরের যুগ্ম কমিশনার বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ৩টার দিকে ডাকাত দলের সদস্যরা সিলেটের ওসমানীনগর থানার শেরপুর নতুন বাজার হাজী ইউনুস উল্ল্যাহ মার্কেটের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) লিমিটেডের নিচতলায় স্থাপিত ব্যাংকের এটিএম বুথের দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ডকে মারপিট করে। তার হাত ও মুখ স্কচটেপ পেঁচিয়ে বেঁধে ফেলে। পরে ডাকাতরা এটিএম বুথে স্থাপিত এটিএম মেশিনের সামনের দরজা ও লক ভেঙে নগদ ২৪ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় ১২ সেপ্টেম্বর সিলেটের ওসমানীনগর থানায় একটি মামলা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘গ্রেফতাররা তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে বেশ পারদর্শী। বুথের এটিএম মেশিন ভেঙে টাকা লুটের মূল পরিকল্পনাকারী মো. শামীম আহাম্মেদ নিয়মিত ভারতীয় মেগা সিরিয়াল সিআইডি অনুষ্ঠানটি দেখতেন। ওই সিরিয়াল দেখে এটিএম বুথের মেশিন ভাঙার কলাকৌশল রপ্ত করেন এবং টাকা লুটের পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী তার সহযোগী গ্রেফতার নূর মোহাম্মদ সেবুল ও আব্দুল হালিমের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করেন।
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তারা মুখে মাস্ক, মাথায় গোলাপি রঙের কাপড় বেঁধে এবং মাথায় ক্যাপ পরে শাবল ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিসহ ইউসিবির ওই এটিএম বুথে কে। এটিএম বুথের সিসি ক্যামেরায় তাদের চেহারা যেন না দেখা যায় সেজন্য কালো রঙের স্প্রে করে ক্যামেরার লেন্স ঝাঁপসা করে দেন তারা। এ সময় তারা এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ডকে মারধর ও হাত-মুখ স্কচটেপ দিয়ে বাঁধেন। পরে তারা শাবল দিয়ে এটিএমে বুথের লক ও বক্স ভেঙে ২৪ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, এই চক্রের মূলহোতা শামীম আহাম্মেদ দীর্ঘদিন ওমান থাকার পরে দেশে এসে বেশি টাকা আয়ের লোভে সিআইডি দেখে ডাকাতির পরিকল্পনা করেন। গ্রেফতারকৃতদের বাকি দুজন- নূর মোহাম্মদ আগে দর্জির কাজ করতেন। আর আব্দুল হালিম চায়ের দোকানদান ছিলেন।
তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা আছে কি-না জানতে চাইলে হারুন-অর-রশীদ বলেন, শামীম ও নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা রয়েছে। পলাতক একজনসহ এই চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।