কাজিরবাজার ডেস্ক :
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে প্রতিবারের মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৭৪-এ জাতিসংঘে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী বিগত বছরগুলোর মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দেবেন। এটি হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘে ১৮তম বাংলায় ভাষণ। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সম্মানে জাতিসংঘের সদর দফতরের উত্তর লনে ইউএন গার্ডেনে একটি বেঞ্চ উৎসর্গ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগ দিতে রবিবার বিকেলে ফিনল্যান্ড থেকে নিউইয়র্ক পৌঁছেছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট স্থানীয় সময় রবিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহিদুল ইসলাম এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতেমা প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং পিএমও সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন।
বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রাসহকারে লোটে নিউইয়র্ক প্যালেসে নিয়ে যাওয়া হয়। নিউইয়র্কে থাকাকালীন শেখ হাসিনা সেখানেই অবস্থান করবেন। নিউইয়র্ক যাবার পথে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীরা ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে দুই দিনের যাত্রা বিরতি শেষে স্থানীয় সময় রবিবার বিকেল ৪ টা ১৬ মিনিটে হেলসিঙ্কির ভ্যানটা বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। নিউইয়র্কে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনা হেলসিঙ্কিতে দুই দিনের যাত্রা বিরতি করেন।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফরের দেড় বছর পর এটি তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন এবং সেখানে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য সরকারী সফরের অংশ হিসেবে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্কে অবস্থান করবেন।
নিউইয়র্কে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী বিগত বছরগুলোর মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দেবেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ২০ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের আহবানে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের একটি ছোট দলের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যোগ দেবেন। পরে তিনি একটি গাছের চারা রোপণ করবেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সম্মানে জাতিসংঘ সদর দফতরের উত্তর লনে ইউএন গার্ডেনে একটি বেঞ্চ উৎসর্গ করবেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ‘সাসটেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন নেটওয়ার্ক’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
এছাড়া সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ বিতর্কের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কর্তৃক আয়োজিত ‘বিজনেস গোলটেবিল : ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’ অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন। পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ডারবান ডিক্লারেশন এ্যান্ড প্রোগ্রাম অব এ্যাকশন গ্রহণের ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সাধারণ পরিষদের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন।
এছাড়া তিনি ‘হোয়াইট হাউজ বৈশ্বিক কোভিড-১৯ শীর্ষ সম্মেলন : মহামারী সমাপ্তি এবং আরও ভাল অবস্থা গড়ে তোলা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগদান করবেন এবং বক্তৃতা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একই দিন বিকেলে শেখ হাসিনা ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট : একটি টেকসই সমাধানের জন্য করণীয়’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং সেখানে পূর্বে রেকর্ড করা বক্তৃতা দেবেন।
আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সুইডিশ মিশন আয়োজিত ‘জাতিসংঘের সাধারণ কর্মসূচী : সমতা ও অন্তর্ভুক্তি অর্জনের পদক্ষেপ’ শীর্ষক নেতাদের নেটওয়ার্কের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দফতরে সংস্থার মহাসচিব কর্তৃক আহ্বান করা ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দশক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে খাদ্য ব্যবস্থা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে শেখ হাসিনা বেশ কয়েক বিশ্বনেতার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন- ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসেন, বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিজ মিয়া আমোর মোটলি কিউসি, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট, নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ এবং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট এনগুয়েন জুয়ান ফাইক। এছাড়া তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন।
জাতিসংঘ অধিবেশন এবং নিউইয়র্কে অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রীর ২৫-৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসি সফরের কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে শেখ হাসিনা ৩০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন এবং ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে যাত্রা বিরতির পর পহেলা অক্টোবর দেশে ফিরবেন।