কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, দেশের ১৮ বছরের ওপরের সকল বাংলাদেশী নাগরিককে কোভিড-১৯ এর টিকা দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এছাড়া ১২ বছর ও তদুর্ধ বয়সের ছাত্রছাত্রীদের করোনাভাইরাসের টিকার আওতায় আনা হবে। টিকা প্রদানের বয়সসীমা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা হচ্ছে।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ক্রমান্বয়ে দেশের ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ডিসেম্বরের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রাার ৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণের ব্যবস্থা নেয়া, ১২ বছর ও তদুর্ধ ছাত্রছাত্রীগের টিকার আওতায় নিয়ে আসা, মন্ত্রণালয়ে নেয়া প্রতিবন্ধীদের বুবরন কার্ডের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নেয়ার ব্যবস্থা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শ্রমিকদের টিকা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সংসদ নেতা জানান, বর্তমান টিকাদান কর্মসূচীর লক্ষ্যমাত্রা সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সকল শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে বয়সসীমা ১৮ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, সরকারের পদক্ষেপে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৪ কোটি ৬৫ লাখ ১৩ হাজার ৬৬০ ডোজ টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় চার কোটি ৪৪ লাখ ৩১ হাজার ৮৮০ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। প্রতিমাসে যাতে এক কোটি ডোজ বা তার বেশি টিকা পাওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অক্টোবর থেকে প্রতিমাসে দুই কোটি হিসাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৬ কোটি সিনোফার্ম টিকা পাওয়া যাবে।
করোনার সংক্রমণ এখনও চলমান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা করি সবার সহযোগিতায় চলমান এই বৈশ্বিক মহামারী সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হব। পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। এজন্য টিকা গ্রহণের পাশাপাশি সবাইকে নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টিকা প্রদান করা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সংসদ নেতা জানান, চলমান টিকা কার্যক্রম জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ইতোমধ্যে সব বিভাগীয় সদর, জেলা সদর ও উপজেলা সদরে অবস্থিত ৬৭৩টি টিকা কেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণকে টিকা দেয়া হচ্ছে। ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মজুদ ভ্যাকসিনের পরিমাণ ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার ১১৯ ডোজ। এ পর্যন্ত ২ কোটি ৯ লাখ ২২ হাজার ৭১৫ জনকে প্রথম ডোজ এবং ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ৪৬ জনকে দ্বিতীয় ডোজসহ সর্বমোট ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৭৭ হাজার ৭৬১ ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, যখন কোন একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্দিষ্ট অনুপাতে ভ্যাকসিন বা টিকা দেয়া যায়, তাহলে ওই কমিউনিটিতে আর সংক্রমণ হয় না। হার্ড ইমিউনিটি তৈরির জন্য প্রতি ১শ’ জনের মধ্যে কতজনকে টিকা দিতে হবে তা বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয় এবং কোভিড-১৯ এর বেলায় এটি কত হবে তা নির্ধারণ করা যায়নি। যা এখনও গবেষণাধীন রয়েছে। সেজন্য বর্তমানে ১৮ বছরের ওপরের সকল বাংলাদেশী নাগরিককে কোভিড-১৯ এর টিকা দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। যে কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে টিকা সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেনের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, পৃথিবীর সকল উন্নত দেশে স্বাস্থ্যসেবায় টিস্যু ব্যাংকিং গবেষণা ও সেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ এতদিন এ কার্যক্রম হয়েছে সীমিতভাবে। টিস্যু ব্যাংকিং সেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ মানব টিস্যু বা কোষ ব্যাংক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি জানান, এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্পের সুফলভোগী হিসেবে আমাদের চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে। এ প্রকল্পের আওতায় টিস্যু ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্প্রসারিত হবে এবং বিভিন্ন জটিল ও দূরারোগ্য রোগ, অস্থিজনিত ত্রুটির কারণে পঙ্গুত্ব, পুড়ে যাওয়া রোগীদের জন্য বায়োমেটেরিয়াল তৈরি ও ব্যবহারের উদ্দেশ্যে গবেষণা পরিচালনাসহ দূরারোগ্য রোগের চিকিৎসায় টিস্যু ও সেল থেরাপিভিত্তিক চিকিৎসাসেবার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সংসদ সদস্য আছলাম হোসেন সওদাগরের প্রশ্নের লিখিত জবাবে সংসদ নেতা জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারের পক্ষ থেকে দেশে ও প্রবাসে বিভিন্ন পেশার শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তাঁর সরকার ৪২টি শিল্প সেক্টরে কর্মরত শ্রমজীবী মানুষের জন্য ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করেছে। দেশের রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্প কলকারখানাসমূহে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি (স্কেলভিত্তিক) ৪ হাজার ১৫০ টাকা হতে বৃদ্ধি করে ৮ হাজার তিন শ’ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তৈরি পোশাক শিল্প কলকারখানাসমূহে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি (স্কেলভিত্তিক) ১ হাজার ৬৬২ টাকা হতে পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করে ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।