ভূমি তথ্য ব্যাংক

12

ভূমি তথ্য ব্যাংকের ধারণাটি সম্ভবত বিশ্বে একেবারেই নতুন। মৌলিক ও সৃজনশীল এই চিন্তার রূপকার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি তথা ডিজিটাল পদ্ধতিগত পরিবর্তনের মাধ্যমে সারাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো হয়েছে ও হচ্ছে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমি তথ্য ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর পাশাপাশি উদ্বোধন করেন অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস এবং ভূমি ভবনের কার্যক্রম। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, দেশব্যাপী ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় জটিলতা, ভোগান্তি ও হয়রানি প্রতিরোধে সর্বস্তরের জনগণের জন্য ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজিয়ে ডিজিটালাইজড করতে হবে। সরকারপ্রধানের এই নির্দেশকে ধারণ করে খুলনা জেলা প্রশাসক নিজস্ব উদ্ভাবনী চিন্তার আলোকে তৈরি করেন টেকসই ভূমি তথ্য ব্যাংক। এতে একটি এ্যাপের মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি, অর্পিত সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তি, হাটবাজার, খাস জমি, জলাশয়, নদী সিকস্তি, জনমহাল, জলমহালের ছবিসহ বর্তমান অবস্থা, এসএ খতিয়ান, আরএস খতিয়ান সংবলিত তথ্য সন্নিবেশিত থাকবে। ফলে ভূমি সংক্রান্ত জালজালিয়াতি ও দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ হবে বহুলাংশে। এর পাশাপাশি অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধসহ যাবতীয় ভূমি সেবা পাওয়া যাবে ঘরে বসেই।
১৭ কোটির বেশি জনসংখ্যার ছোট একটি দেশে যার ছোট এক খণ্ড জমি আছে তিনিই বিলক্ষণ জানেন যে, এর রক্ষণাবেক্ষণসহ অধিকার বজায় রাখতে প্রতিবছর প্রতিনিয়ত কি দুঃসহ ভোগান্তিতে নিপতিত হতে হয়। এই খাতে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের বেড়াজালও প্রভূত, বলা যায় পদে পদে। দেশে ভূমি সংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দামার সংখ্যাও অগণন, যা দেওয়ানি আদালতগুলোতে মীমাংসার অপেক্ষায় ঝুলে আছে বহু বছর ধরে। এবার সম্ভবত এ সবের অবসান হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য মতে, জমি বেচাকেনা, রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, জমির খাজনা, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ, খাস বা পরিত্যক্ত, পুকুর-হাট-বাজার ইজারা, ওয়ারিসান জমি হস্তান্তর, জমি বন্ধক, বর্গাÑকোন কিছুতেই আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না। এক কথায় ‘জমি যার রেকর্ড তার’ বিষয়টি নিশ্চিত হবে। সমগ্র দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ডিজিটালাইজড হওয়ায় সবকিছু সম্পন্ন করা যাবে ঘরে বসেই। ভূমির মালিককে যেতে হবে না ভূমি অফিসে। কর পরিশোধ করা যাবে ঘরে বসেই অনলাইনে। এতে একদিকে যেমন ভূমিসেবা সহজীকরণ হবে, অন্যদিকে কমবে হয়রানিসহ ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম-অব্যবস্থা।
দেশে ভূমির পরিমাণ যেহেতু সীমাবদ্ধ ও সীমিত এবং জনসংখ্যা বেশি, সেহেতু তা অবশ্যই পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবহারের দাবি রাখে। সেটাও হতে হবে সুষ্ঠু, সমন্বিত, সর্বোপরি ডিজিটাল ও পরিবেশবান্ধব। নতুন প্রতিষ্ঠিত ভূমি ব্যাংকের ডাটাবেজ ব্যবহারের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা গেলে একদিকে যেমন জমির অপরিকল্পিত ব্যবহার রোধ হবে, অন্যদিকে সুনিশ্চিত হবে উন্নয়নের গতি।