কাজিরবাজার ডেস্ক :
আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দেবে না ইউরোপ। নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আফগান শরণার্থী সংকটের ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি ও আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে অমানবিক হিসেবে অভিহিত করেছে মানবাধিকার সংস্থাটি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা সহমর্মিতা দেখানোর পরিবর্তে আফগান শরণার্থীদের এ বার্তা দিয়েছে যেসব আফগান দেশ থেকে পালাচ্ছে তারা যেন ইউরোপকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র না ভাবে।
সংস্থাটি গত ৩১ আগষ্ট ইউরোপের বিভিন্ন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেছে, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক ও চেকপ্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধিরা আফগানদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তারা যেন দেশেই থেকে যায় এবং আমরা ইউরোপ থেকে তাদের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাব।
বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো অনেকটা বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তা বলছে। এ কারণে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আফগান শরণার্থীদের ব্যাপারে আরও মানবিক আচরণ করার এবং তাদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য ইউরোপের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। একইসঙ্গে ইউরোপ যেন আফগানদের আশ্রয়ের আবেদনকে বিবেচনায় আনে সে বিষয়েও জোর দেওয়া হচ্ছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আফগান শরণার্থীদের ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আচরণের প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তীব্র সমালোচনা থেকে মানবাধিকারের ব্যাপারে পাশ্চাত্যের দাবির অসারতা প্রমাণিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আফগানিস্তানে যে রাজনৈতিক ও মানবিক সংকট চলছে তা দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন ও ন্যাটো সেনাদের উপস্থিতির ফল, যা কিনা যুদ্ধ, নিরাপত্তাহীনতা, দরিদ্রতা, মাদক চোরাচালান ও উৎপাদন এবং সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটানো ছাড়া কোনো ফল বয়ে আনেনি।
তড়িঘড়ি করে আফগানিস্তান থেকে দ্রুত মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর অপসারণের ফলে দেশটিতে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তালেবান দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে। এখন সেখানে যে সংকট চলছে ও শরণার্থী সংকট দেখা দিয়েছে তার জন্য সরাসরি দায়ী হচ্ছে ইউরোপসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো। কেননা তালেবান ক্ষমতায় আসার পর দেশটির ভীতসন্ত্রস্ত জনগণ দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে যাদের মধ্যে অনেকে ইউরোপের দিকেও পাড়ি জমাচ্ছে।
তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেয়ার পর এখন ইউরোপীয়রা এ জন্য আতঙ্কিত যে ২০১৫ সালের মতো ফের আফগান শরণার্থীদের ঢল নামতে পারে ইউরোপের দিকে। এ কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা ব্রাসেলসে বৈঠক করেছেন যাতে সম্ভাব্য আফগান শরাণার্থীর ঢল মোকাবিলায় সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া যায়।
কিন্তু আফগান শরণার্থীদের ব্যাপারে যৌথ কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। এমনকি কঠোরতা অবলম্বন করে অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলরসহ অন্য ইউরোপীয় কর্মকর্তারা আফগান শরণার্থীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, তারা যেন ইউরোপে প্রবেশ এবং এখানে থেকে যাওয়ার চেষ্টা না করে। জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোরস্ট শিহোফার বলেছেন, আমরা কোনো আফগান শরণার্থীকে নিতে চাই না।
এদিকে পোল্যান্ড তাদের সীমান্ত থেকে ৩২ জন আফগান শরণার্থীদের একটি দলকে আটক করেছে এবং তাদের আশ্রয় দেওয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়াও আফগানদেরকে বসনিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছে। গ্রিসও ৪০ কিলোমিটারের প্রাচীর নির্মাণ করে তুরস্কের সঙ্গে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে যাতে কোনো আফগান শরণার্থী সেদেশে প্রবেশ করতে না পারে। যদিও এ প্রাচীর নির্মাণের কাজ তারা আরও আগেই শুরু করেছিল।
মোটকথা, ইউরোপের এ আচরণ থেকে বোঝা যায় কোনোভাবেই তারা আফগানদের আশ্রয় দিতে রাজি নয় এবং এ থেকে তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রমাণ পাওয়া যায়। অথচ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তানের সংকটের জন্য পাশ্চাত্যের দেশগুলোই দায়ী।