কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকারি হাট-বাজারের ইজারার আয়ের অর্থ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চিকিৎসায় অনুদানের পরিমাণ বাড়লো। তবে এ অর্থ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার আওতা কমেছে।
নতুন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকারি হাট-বাজারের ইজারার আয়ের ৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় নীতিমালা, ২০২১’ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ নীতিমালা প্রণয়ন করে।
বাস্তবতার নীরিখে নীতিমালাটি যুগোপযোগী করা হয়েছে। বেশির ভাগ বীর মুক্তিযোদ্ধাই এখন বয়োবৃদ্ধ। তাদের সহায়তার ক্ষেত্রে এখন চিকিৎসার ওপরই আমরা জোর দিচ্ছি। এজন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনুদানের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকারি হাসপাতালে জটিল ও সাধারণ চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা অনুদান পাবেন। একই সঙ্গে জটিল রোগের ক্ষেত্রে আরও বেশি অর্থ খরচ হলে অতিরিক্ত হিসেবে এককালীন সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার আর্থিক অনুদান দেয়া হবে।
আগের নীতিমালা অনুযায়ী এ খাত থেকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হতো।
ওই নীতিমালা অনুযায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহনির্মাণ বা সংস্কার, চিকিৎসা, শিক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এবং কন্যাসন্তানের বিয়ে- এই পাঁচটি খাতে সহায়তা দেয়া হতো। নতুন নীতিমালায় চিকিৎসা ও প্রাকৃতিক দুযোগে ক্ষতিগ্রস্ত- শুধু এই দুটি খাতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেয়া যাবে।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া বলেন, ‘বাস্তবতার নীরিখে নীতিমালাটি যুগোপযোগী করা হয়েছে। বেশির ভাগ বীর মুক্তিযোদ্ধাই এখন বয়োবৃদ্ধ হয়ে গেছেন। তাদের সহায়তার ক্ষেত্রে এখন চিকিৎসার ওপরই আমরা জোর দিচ্ছি। এজন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনুদানের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনে বিশেষ বিবেচনায় এককালীন এক লাখ টাকা দেয়ারও সুযোগ রাখা হয়েছে।’
সচিব বলেন, ‘সহায়তার ক্ষেত্রে তার পারিবারিক অবস্থা, আয়, রোগের ধরন, চিকিৎসা পদ্ধতি বিবেচনায় নেয়া হবে। যদি প্রয়োজন হবে আরও সহায়তা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সহায়তার ক্ষেত্রগুলো কমিয়ে আনা হয়েছে। যৌক্তিকভাবে যাচাই করেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যেমন- আমরা দেখেছি এখন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারে অবিবাহিত মেয়ে সেভাবে নেই। এখন নাতি-নাতনি নিয়ে তাদের জীবন। তাই মেয়ে বিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে সহায়তাটি আমরা বাদ দিয়েছি।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০১১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সরকারি হাট-বাজারের ব্যবস্থাপনা ইজারা পদ্ধতি ও এ থেকে প্রাপ্ত আয় বণ্টন সম্পর্কিত নীতিমালা এবং একই বিভাগের ২০১২ সালের ৭ মে’র পরিপত্র অনুযায়ী দেশের সরকারি হাট-বাজারের ইজারার আয়ের ৪ শতাংশ অর্থ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা করার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সব সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তার স্ত্রী বা স্বামীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকার আর্থিক চিকিৎসা অনুদান দিতে পারবে।
মন্ত্রণালয় বরাদ্দ করা অর্থ দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যয়, চিকিৎসাসেবার মান, আয়ন-ব্যয়ন এবং ব্যয় যাচাইসহ সার্বিকভাবে চিকিৎসা বাবদ বরাদ্দ অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হওয়ার বিষয়টি পদ্ধতিগতভাবে সুনির্দিষ্ট আদেশের মাধ্যমে নিশ্চিত করবে। সরকারি হাসপাতালের প্রধান বা তত্ত্বাবধায়ক এবং বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক বা অধ্যক্ষ, আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধার একাধিক স্ত্রী থাকলে চিকিৎসায় সব স্ত্রী একত্রে মোট সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা পাবেন।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, সরকারি ও বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা নিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কোনো আবেদন করতে হবে না। তবে চিকিৎসা সুবিধা পেতে মুক্তিযোদ্ধার সপক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমাণ বা মন্ত্রণালয়ের ইস্যু করা পরিচয়পত্র দাখিল করতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচিতিমূলক দলিলপত্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এমআইএস তালিকা বা শহীদ গেজেট বা খেতাবপ্রাপ্ত বা যুদ্ধাহত গেজেটের সঙ্গে যাচাই করবে।
কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তার স্ত্রী বা স্বামী কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হলে এবং ওই রোগের চিকিৎসায় দেশে বা বিদেশে সীমার বেশি অর্থ ব্যয় হলে অতিরিক্ত হিসাবে সরকারের কাছ থেকে এককালীন সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার আর্থিক অনুদান পাবেন বলেও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তার স্ত্রী বা স্বামী বিশেষ চিকিৎসা অনুদান জীবদ্দশায় একবারের বেশি পাবেন না।
জটিল রোগের চিকিৎসা অনুদানবিষয়ক জেলা বাছাই কমিটি থাকবে। সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন হবেন এ কমিটির সভাপতি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন) নেতৃত্বে হবে জটিল রোগের চিকিৎসা অনুদানবিষয়ক কেন্দ্রীয় মঞ্জুরি কমিটি।
দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর নির্মাণে সহায়তা ৫০ হাজার টাকা
নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর নির্মাণ বা সংস্কারের জন্য জীবিত অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) (মহানগরের ক্ষেত্রে) কাছে আবেদন করবেন। আবেদনের সঙ্গে ক্ষয়-ক্ষতির ছবি সংযুক্ত করতে হবে।
অনুদান মঞ্জুরি বাছাই কমিটি আবেদন বাছাইয়ের পর ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে অনুদান মঞ্জুরের জন্য সুপারিশসহ প্রতিবেদন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠাবেন। মন্ত্রণালয় থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর পুনর্র্নিমাণ বা সংস্কার সহায়তা হিসেবে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া যাবে বলে নীতিমালায় উল্লেথ করা হয়েছে।
আগের নীতিমালা অনুযায়ী এ সহায়তার পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা।
জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য এ অনুদান প্রযোজ্য হবে এবং জীবদ্দশায় একবারের বেশি তারা এ অনুদান পাবেন না বলে নতুন নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) নেতৃত্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনুদান মঞ্জুরি মহানগর বাছাই কমিটি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে হবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনুদান মঞ্জুরি উপজেলা বাছাই কমিটি।