স্টাফ রিপোর্টার :
কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপির উদ্যোগে সিলেট নগরীর মিরাবাজাস্থে শ্যামল সিলেট হল রুমে রবিবার দুপুর ২টায় এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, হযরত শাহজালাল (রহ.) এর পুণ্যভূমি সিলেট বিএনপি পরিবার আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। যদি কোন কার্যকরী ফলাফল এবং সুরাহা না করা হয়, তাহলে সিলেট বিএনপি পরিবার যে ক্ষতির সম্মুখীন হবে তা আর পূরণ করা যাবে না। আমাদের বক্তব্য হলো- চক্ষু বন্ধ করলেও প্রলয় রোধ করা যায় না। আমরা আশা করি পরিস্থিতির গুরুত্ব আপনারা অনুভব করবেন।
আজ আমরা দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে সবার সামনে হাজির হয়েছি। বিগত ৩/৪ বছর থেকে সিলেট বিএনপি পরিবারে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। সিলেট জেলা বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন কমিটি গঠনে অনিয়ম ও অসাংবিধানিক তথা সাধারণ রাজনৈতিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সংগঠনকে ধ্বংস করার হীন উদ্দেশ্যে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে।
ছাত্রদলের গঠন প্রক্রিয়ায় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রদলের বাদ দেওয়া হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামে যারা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলো রহস্যজনক ভাবে তাদেরকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমনকি ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে। মর্মান্তিক বিষয় হলো এই হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদেরকেও কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জেলা ও মহানগর যুবদলের কমিটি গঠনের সময় যারা তিল তিল করে যুবদলকে সংগঠিত করেছিল, তাদেরকেও যুবদলে স্থান দেওয়া হয়নি। যুবদলের রাজপথের পরিক্ষীত নেতাকর্মীদের বাদ দেওয়ার কারণে সিলেট বিএনপি পরিবারে এক বিষ্ফোরণমুখ পরিবেশ তৈরী হয়। এমতাবস্তায় সিলেটের ৪ জন কেন্দ্রীয় নেতা মাঠ পর্যায়ের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের চাপে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে মহাসচিবের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে নেতৃবৃন্দ পদত্যাগ থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হোন।
কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সর্বশেষ সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এখানেও আমরা লক্ষ্য করলাম- যারা রক্ত ও ঘামের বিনিময়ে স্বেচ্ছাসেবক দলকে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে তৈরী করেছিল, তাদেরকেও কমিটি থেকে বাদ দিয়ে বিএনপিতে পদধারী কিছু লোকদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হলো। ফলশ্রুতিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর ও জেলার বেশীরভাগ নেতাকর্মী রাগে ও ক্ষোভে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। এ সকল বিষয় পর্যবেক্ষণ করে আমরা বিএনপি পরিবার অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত।
দুর্দিনে আদর্শিক কর্মী যারা জীবন বাজি রেখেছিল তাদের মধ্যে এডভোকেট সামসুজ্জামান জামান অন্যতম। সম্প্রতি সিলেটে যে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে সেগুলোতে দেখা যায় দলের জন্য জীবন বাজি রেখে যারা সকল আন্দোলন সংগ্রামের মুখোমুখি হয়েছে। আজ তাদেরকে বেছে বেছে দল থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা আজকে যারা উপস্থিত হয়েছি, আমাদের পরিচয় সম্পর্কে আপনারা জানেন। আমরা এই দলটিকে ভালোবেসে শুরু থেকে এই পর্যন্ত সকল বিপদ এবং প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে দলের সাথে সম্পৃক্ত আছি। আজকে কিছু ব্যক্তি বিশেষকে দলে সুবিধা করে দেয়ার জন্য, দলের আদর্শিক নিবেদিত প্রাণ নেতৃবৃন্দদের আশা-আকাঙ্খা ভূলন্ঠিত করে রাখার চেষ্টা চলছে। নির্মম হলেও সত্য যে, আজকে রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। কিছু মানুষ এই দলের এমপি মন্ত্রী হওয়ার জন্য দলটিকে তার ব্যক্তিগত জায়গীর হিসেবে ব্যবহার করছে।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন যেখানে মুখ্য হওয়ার কথা, সেই দিক থেকে আমরা দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছি। আজকে যুব ও তরুণ প্রজন্ম আদর্শহীনতার রাজনীতির কারনে রাজনীতিটাকেই নীতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে।
তিনি বিএনপির উচ্চপদস্থ নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকষর্ণ করে বলেন, দলটির আদর্শিক কর্মী যদি হারিয়ে যায়, তাহলে শহীদ জিয়ার আদর্শ হারিয়ে যাবে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি যখন বাংলাদেশের সকল মানুষের দাবি, এই দাবিটিকে পূরণ করার জন্য যেসকল নেতৃত্ব দলে প্রয়োজন তা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজকে যদি “বনিক” শ্রেণী ও “নব্য সুবিধাভোগী চক্রের” কাছে দল জিম্মি হয়ে যায়, তাহলে দল এবং জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আমরা শুধু সিলেট নয় সমগ্র বাংলাদেশের ত্যাগী, পরিশ্রমী ও বঞ্চিত নেতৃবৃন্দের কথা বলছি। বিএনপির নীতিনির্ধারক নেতৃবৃন্দ যদি এ সমস্ত বিষয়ে দৃষ্টি না ফেরান, তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে।
এডভোকেট সামসুজ্জামান জামানের প্রসঙ্গে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের তৎকালীন অনেক নেতা ব্যর্থ হলেও সামসুজ্জামান জামান রাজপথে সেদিন বিজয়ের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এছাড়াও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ আন্দোলনসহ সর্বশেষ সরকার বিরোধী অসযোগ আন্দোলনসহ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথে জীবনপন নেতৃত্ব দিয়েছেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা সেলিম আহমদ, জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য আহমেদুল হক চৌধুরী মিলু মিয়া, মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি সুদ্বীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু, মহানগর বিএনপির তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক ফয়েজ আহমদ দৌলত, সহ তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক হাজী শওকত আলী, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন লস্কর, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, মহানগর বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মিনহাজ উদ্দিন মুসা, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য ও সাবেক জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদিকুর রহমান সাদিক, জেলা বিএনপির সাংষ্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা জাসাসের আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আহমদ রানু, জেলা তাঁতীদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জয়নুল হক,মহানগর বিএনপির সদস্য আব্দুল গফফার, জেলা বিএনপির সাবেক সহ প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক প্রভাষক আজমল হোসেন রায়হান, জেলা বিএনপির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মতিউল বারী খুর্শেদ, বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নজরুল খান, মহানগর জাসাসের সাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দিন আহমদ মাসুম, মহানগর বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক কাউন্সিলর আব্দুর রকিব তুহিন,জেলা বিএনপির সহ স্বেচছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক বেলাল,সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষক সম্পাদক খালেদুর রশিদ ঝলক, মহানগর বিএনপির সহ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা কামাল ফরহাদ, জেলা বিএনপির বিএনপি সাবেক সদস্য জসিম উদ্দিন,আবুল খায়ের দেওয়ান নিজাম খান, সিলেট জেলা জাসাসের সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হান এইচ খান,বিএনপি নেতা দুদু মিয়া,শামীম আহমদ প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি