সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকলে আসছে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। মাঠ পর্যায়ে স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষকে যেকোনো সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রকাশিত খবর বলা হচ্ছে, শুরুতে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস নেওয়া হবে। নবম ও একাদশ শ্রেণির ক্লাস হবে সপ্তাহে দুই দিন। অন্যান্য শ্রেণিতে সপ্তাহে এক দিন ক্লাস নেওয়া হবে। যদি পরিস্থিতি ভালো হয়, তাহলে স্কুল খোলার দুই-তিন সপ্তাহ পর থেকে সব শ্রেণিতে স্বাভাবিক ক্লাস নেওয়া হতে পারে। প্রাথমিকেও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের বেশিদিন স্কুলে আনা হবে। অন্যান্য শ্রেণিতে দু-এক দিন ক্লাস হতে পারে। আর প্রাক-প্রাথমিকের ক্লাসও অবস্থা বিবেচনা করে শুরু করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের বৈঠকে খোলার সিদ্ধান্ত নেবে।
গত দেড় বছরে বিধি-নিষেধ বা লকডাউনের সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুললেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শিক্ষা খাত। একদিকে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে যেতে পারেনি, অন্যদিকে অনলাইনে ক্লাস করতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের যে আনন্দ শিক্ষকরা তা পাননি। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্রেণিকক্ষে যে সম্পর্কটি তৈরি হয়, তা অনলাইনে সম্ভব নয়। অন্যদিকে এরই মধ্যে এইচএসসি ও এসএসসিতে অটো পাস দিলেও উচ্চশিক্ষায় তারা ভর্তি হতে পারেনি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন পর্যন্ত ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি। আগের বছর যাঁরা ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে একটি বছর। এই সময়ে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অনেককেই চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। আবার শিক্ষার্থীদের মানসিকতায়ও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। তাদের আচরণেও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত চার কোটির বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তাগিদ দিয়েছেন। ইউনিসেফ বলছে, যত বেশি সময় শিশুরা স্কুলের বাইরে থাকবে, সহিংসতা, শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের ঝুঁকির কারণে তাদের স্কুলে ফেরার সম্ভাবনা তত কমে যাবে। দীর্ঘ সময় সরাসরি পাঠদান বন্ধ থাকলে পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুদের স্বাস্থ্য, সুরক্ষা ও মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতার ওপর গুরুতর প্রভাব পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে টিকা নিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ শিক্ষকও টিকা নিয়ে নিয়েছেন। সরকারি পর্যায়ের প্রায় সব শিক্ষকই টিকা নিয়েছেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাড়ে তিন লাখেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারী টিকা নিয়েছেন। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে দ্রুততম সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যেতেই পারে।