সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে অবৈধ মোবাইল শনাক্তের কাজ

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট শনাক্তকরণের কাজের সময় বাড়ানো হয়েছে। এজন্য শুরুতে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে এক মাস সময় দেয়া হলেও এখন তা বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। কাজটি অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ উল্লেখ করে গ্রাহকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন এবং নির্ভুলভাবে শেষ করতেই এটি করা হয়েছে। এছাড়া এ সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট শনাক্তের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন পন্থায় অবৈধভাবে প্রবেশ করা এসব মোবাইল সেট পরে বিচ্ছিন্ন করা হবে। এজন্য ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেম ব্যবহার করছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ। দেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করবে বিটিআরসি। এতে মোবাইল গ্রাহকদের আতঙ্কিত না হওয়ার জন্যও বলেছে প্রতিষ্ঠানটি। অবৈধ মোবাইল সেট বৈধ করার সময় পাবেন সবাই। এখনই কারও মোবাইল সেট নিষ্ক্রিয় বা বন্ধ করা হবে না। নিবন্ধিত বৈধ মোবাইল সেট হারিয়ে গেলে তা নিষ্ক্রিয় করা যাবে।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রতিটি মোবাইল সেটের ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) নম্বর আছে, যা মোবাইলটির আইডেন্টিফিকেশন টেক। মোবাইল যখন আমদানি করে তখন আমরা নম্বরসহ এর অনুমতি দেই। যারা বাংলাদেশে প্রোডাকশন করে সেটারও অনুমোদন দেয়া হয় নম্বরসহ। এর বাইরে কিছু মোবাইল স্মাগলিং হয়। বিদেশ থেকে যে কেউ দুটি মোবাইল আনতে পারেন। আবার কেউ কেউ ট্যাক্স দিয়েও নিয়ে আসেন। আমাদের কাছে যে বিষয়টি জটিল ছিল তার প্রথমটি হচ্ছে আগে তো সিমের কোনো নিবন্ধন ছিল না। প্রথমে সিম নিবন্ধন করলাম। এখন জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে সিম খুঁজে পাবেন। কিংবা সিম থাকলে এনআইডি নম্বর খুঁজে পাবেন।’
তিনি বলেন, ‘এরপর দেখতে পাচ্ছি, বেআইনি মোবাইল সেট আমদানি বা চোরাচালান অব্যাহত আছে। এটার ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আমাদের এখানে যারা বৈধ ব্যবসা করেন এবং লোকাল ম্যানুফ্যাকচাররা প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কিন্তু আমরা এই সিস্টেমটা ডেভেলপ করেছি। এই সিস্টেম ডেভেলপ করার পর যেসব মোবাইল নিবন্ধিত হয়নি সেগুলো ৩০ জুন পর্যন্ত নিবন্ধনের জন্য বলেছিলাম। এ ব্যাপারে বলেছি, সিম দিয়ে যেসব মোবাইল চালু আছে সেগুলোর নিবন্ধন দেয়ার জন্য। বৈধ-অবৈধ সেগুলো আমরা যাচাই করিনি।’
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘প্রায় ১৭ কোটি সিম আর ১০ কোটি মোবাইল হ্যান্ডসেট শনাক্ত করা খুবই ডিফিকাল্ট কাজ ছিল। ৩০ জুলাই পর্যন্ত একটা ডেডলাইন দিয়েছিলাম। এই বিশাল ডাটাবেজের কাজটি শেষ করার জন্য অপারেটররা কিছুটা সময় চেয়েছেন। প্রাথমিকভাবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি।’
সময় বাড়ানোর ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের লোকজন মোবাইল সেট ব্যবহার করেন। তাদের অনেকেই হয়তো আইএমইআই নম্বর কোথায় থাকে তা জানেন না। এদের বাদ দিলে চলবে না। মোবাইল অপারেটরদের কাস্টমার কেয়ারে এবং বিভিন্নভাবে যাতে তাদের কাস্টমারদের সচেতন করে কীভাবে আইএমইআই ভেরিফাই করা যায় সেজন্য নির্দেশ দিয়েছি। এসব কারণে তারা আপাতত তিন মাস সময় নিয়েছে। এ সময় দিয়ে অপারেটরদের দায়িত্ব দিয়েছি, যাতে ডাটাবেজগুলো সুষ্ঠুভাবে শেষ করা যায়। কোনো ধরনের ভুল না থাকে।’
সেপ্টেম্বরের পরে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তখন নিবন্ধনের বাইরে কী কী সেট আছে তা সিম দিয়ে শনাক্ত করতে পারব। তারপর দোকানে দোকানে অভিযান চালিয়েও খুঁজে বের করতে পারবো নিবন্ধনের বাইরে কোন সেটগুলো আছে।’
তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হোমওয়ার্ক করব, যাতে কোনো রকমের জটিলতা না পাই। একটা বিষয়ে সতর্ক থাকতে চাই। সাধারণ মানুষের যেন কোনো রকমের কষ্ট না হয় সেটা নিশ্চিত করব। কারণ সাধারণ মানুষ তো এত সব জেনে বুঝে মোবাইল কেনে না এবং এটা তার অপরাধ নয়। কেউ ১ হাজার টাকার একটা সেট কিনেছেন। কিন্তু ১ হাজার টাকার সেট কেনার সময় সে কি আর আইএমইআই দেখবে কিংবা ভেরিফাই করবে? তারপর আবার এরকম হতে পারে বিদেশ থেকে কেউ উপহার দিয়েছেন। এ বিষয়গুলো মূল্যায়ন করে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা একটা জায়গায় যেতে পারবো।’