জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীদের ফোরাম ভালনারেবল-২০ (ভি-২০)-এর প্রথম ফাইন্যান্স সামিটের উদ্বোধন করতে গিয়ে শক্তিশালী জলবায়ু সহনশীল বিশ্ব গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ লক্ষ্যে তিনি চার দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এগুলো হলো- ১. বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে রাখার জন্য প্রত্যেক দেশকে অবশ্যই গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য স্থির করতে হবে। ২. সিভিএফ-ভি-২০ দেশসমূহের সবুজায়ন পুনরুদ্ধারের জন্য ধনী দেশগুলোকে সুবিধা দিতে হবে। মূলধন ব্যয় কমানো এবং বেসরকারী খাতের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট সহায়তা দিতে হবে। ৩. অর্থের প্রবাহ অবশ্যই হবে অনুমানযোগ্য, ভারসাম্যপূর্ণ, উদ্ভাবিত এবং বর্ধিত আকারের। উন্নয়ন সহযোগী এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে অর্থ বরাদ্দ ও ছাড়ের ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। বিভিন্ন জলবায়ু তহবিলের সঙ্গে সমন্বয় থাকতে হবে। ৪. জলবায়ুতাড়িত দুর্যোগ মোকাবেলায় অর্থায়নের ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোকে অবশ্যই সিভিএফ-ভি-২০ দেশসমূহের বিদ্যমান আর্থিক বৈষম্য দূর করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর স্মার্ট ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ামে ভর্তুকি প্রদানের জন্য ধনী দেশগুলোর আর্থিক সমর্থন প্রয়োজন। প্রতিটি প্রস্তাবই ন্যায্য এবং যুগোপযোগী। আমাদের প্রত্যাশা বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের নেতার প্রস্তাবগুলো জরুরীভিত্তিতে বিবেচনা করবেন নিশ্চয়ই। বাংলাদেশের নেতা যথার্থই বলেছেন, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের মাত্র ৫ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো নিঃসরণ করে। কিন্তু এই দেশগুলোই মানুষের তৈরি জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বর্তমান জনকল্যাণমূলক সরকারের গৃহীত পরিকল্পনাসমূহের মধ্যে রয়েছে অভিযোজন কার্যক্রমের জন্য ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান তৈরি। এছাড়াও ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কনট্রিবিউশন (এনডিসি) চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দেশে সবুজায়ন তৈরির লক্ষ্যে মুজিববর্ষে ৩ কোটি গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। জলবায়ু সহনশীল এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সরকার ‘বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান ২১০০’ প্রস্তুত করেছে। জাতিসংঘের আওতায় নবগঠিত সিভিএফ এবং ভি-২০ জয়েন্ট মাল্টি ডোনার ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা দাতা হলো বাংলাদেশ।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই আশঙ্কা জলবায়ু বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই জানিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় বর্তমান সরকার নানা আঙ্গিকে কাজ করে চলেছে। বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের মতো পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষও এখন অনেক বেশি সোচ্চার ও সচেতন।