পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় গত ১ মাসে ৩টি হত্যাকান্ড, ৮টি আত্মহত্যা ও ৬টি ধর্ষণ ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে কমলগঞ্জের সর্বত্র উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন সবাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত জুন মাসে কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। আর আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটেছে ৮টি। একই সাথে ৬টি ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার মত ঘটনাও ঘটেছে।
সরেজমনি খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২১ জুন সকাল সাড়ে ১১টায় কমলগঞ্জের শমশেরনগর বাজারে শিংরাউলী গ্রামের সিএনজি অটো চালক আহাদ মিয়ার ছেলে মুন্না মিয়া ও তার আত্মীয় আফিল মিয়ার ছেলে তুরন মিয়া অতর্কিতভাবে এসে একই এলাকার মুকুল মিয়ার ছেলে বাপ্পা মিয়াকে বেদড়ক মারপিট করে। এ ঘটনায় মুকুল মিয়ার বন্ধু জুয়েল আহমেদ প্রতিবাদ করেছিলেন। পরে হামলাকারীদের পক্ষ নিয়ে এসে সিএনজি অটো চালক শারফিন মিয়ার নেতৃত্বে একদল সিএনজি অটো চালক অতর্কিতে এসে জুয়েল আহমেদকে কিলঘুষি মারলে ঘটনাস্থলে সে গুরুরতভাবে আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার ১৭ দিনেও কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি। গত ২৪ জুন গাড়ি চালানো শিখতে গিয়ে আলীনগরের চিতলীয়া গ্রামে এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চায়ের দোকানে প্রবেশ করলে গাড়ির চাপায় জাফর মিয়া (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। গত ২৮ জুন সোমবার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দি গ্রামে জমির রোপিত ধান খাওয়ার প্রতিবাদ করায় ছাগলের মালিক দুদু মিয়া ও তার ভাই বাচ্চু মিয়ার সাথে ঝগড়া হয় ধানি জমির মালিক শহীদ মিয়ার (৩৬)। এ ঝগড়ার এক পর্যায়ে দুদু মিয়ার ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলের মারা যান ধানি জমির মালিক শহীদ মিয়া। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হলে পুলিশ দুদু মিয়াকে আটক করে। গত ১ জুন রহিমপুর ইউনিয়নের কালেঙ্গা গ্রামের টুটুল মিয়া (৩৫) নামে এক মানসিক রোগী বিষপান করে আত্মহত্যা করে। ২ জুন শমসেরনগর চা বাগানের ৬ নম্বর টিলায় সম্ভু বাউরী (৪৫) নামে এক শ্রমিক গাছের সাথে দঁিড় দিয়ে আত্মহত্যা করে। ১৩ জুন মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বিক্রমকলস গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী দিপা চৌধুরী (২৮) এর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। পরে ওই ঘটনার নিহতের স্বজনরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১৫ জুন কালাছড়া গ্রামের ধনা মিয়ার ছেলে সোলেমান মিয়া (২৬) আত্মহত্যা করে মারা যায়। ২৭ জুন রবিবার মাধবপুর ইউনিয়নের শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানে স্বামী আব্দুল মিয়ার নির্যাতন সইতে না পেরে ক্ষোভে বাজারের একটি কীটনাশকের দোকান থেকে বিষ কিনে রাস্তায় বিষপান করে বিদেশ ফেরৎ গৃহবধূ সোমেনা আক্তার (২২)। ২৮ জুন ভাবীর সাথে অভিমান করে দুপুরে কমলগঞ্জ পৌরসভার খুশালপুর গ্রামের এলাইছ মিয়ার মেয়ে হেপী আক্তার (১৮) বিষপান করলে তাকে দ্রুত সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। একদিন পর সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থা সে মারা যায়। গত ২৯ জুন মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টায় আলীনগর ইউনিয়নের লাংলিয়া গ্রামে পরনের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ঘরের চালার সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করে কিশোরী মেয়ে রুনা আক্তার (১৬)। এছাড়াও গত এক মাসে কমলগঞ্জে ৬টি ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটে। এ ৬টি ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় মামলাও হয়েছে।
এ দিকে শমসেরনগরের খুন হওয়া জুয়েল আহমেদের স্ত্রী বুশরা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার ১৭ দিন পরও পুলিশ কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারিনি। পুরো শমশেরনগরবাসী জানেন একটি প্রভাবশালী চক্র হত্যাকারীদের রক্ষার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে তিনি মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়ার সাথে কথা বলেছিলেন। তারপরও পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি।
কমলগঞ্জের লেখক ও গবেষক আহমেদ সিরাজ ও সুজা মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ম. মুর্শেদুর রহমান বলেন, গত জুন মাসে ৩টি হত্যা ও ৮টি আত্মহত্যা ও ৬টি ধর্ষণ ঘটনায় সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এটি আইন শৃংখলার অবনতি বলে মনে করেন। তাছাড়া যুব সমাজ দিনে দিনে মাদকের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এতসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, আসামীদের গ্রেফতার ও বিচার হলে পরবর্তীতে এ ধরণের ঘটনা কম হতো।
কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা ঘটনাগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হত্যা মামলার একটিতে ও একটি ধর্ষণ মামলায় তাৎক্ষণিক ২ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামীরা পলাতক রয়েছে। আর বাকি আসামীদের গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে পুলিশী জোর অভিযান চলছে।