মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০২০-২১ অর্থ বছরে ‘সঙ্গনিরোধ ব্যয়’ খাতে মৌলভীবাজারে বরাদ্দ দেয়া হয় ২ কোটি ৭৭ লাখ ৫ হাজার ৮৮৮ টাকা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খরচ হয়েছে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫৮৯টাকা। ফেরত গেছে ৯১ লাখ ১২ হাজার ২৯৯ টাকা।
বিষয়টি জানাজানি হলে জেলাজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই মনে করছেন, সঠিকভাবে খরচ করলে জেলায় স্বাস্থ্যখাতে আরও উন্নীতকরণ করা যেতো। তবে জেলা সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, সরকারের বরাদ্দকৃত সুনির্দিষ্ট খাতের টাকা ভিন্ন খাতে খরচ করার এখতিয়ার কারও নাই।
সম্প্রতি দেশব্যাপী করোনা সংক্রমণের হারা বাড়ার সাথে সাথে মৌলভীবাজার জেলার করোনা রোগীর সংখ্যাও ক্রমান্ময়ে বাড়ছে। এ পর্যন্ত ৩ হাজারের বেশী করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে এই জেলায়। মৃতের সংখ্যা ৩৬ ছাড়িয়েছে। জেলা জুড়ে আতঙ্ক বাড়ছে। এরমধ্যে এই বরাদ্দের টাকা ফেরতের ঘটনায় বিভিন্ন মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সচেতন নাগরিকরা দাবি করছেন, মৌলভীবাজার জেলার কোন উপজেলা হাসপাতালে নেই করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ কিংবা সিসিইউ বেড। নেই পর্যাপ্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার। যদি ওই বরাদ্দের টাকা ফেরত না দিয়ে এসব খাতে খরচ করা যেতো তবে তৃণমূলে মানুষ চিকিৎসা সেবা পেতো।
এদিকে জেলা সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, ‘কোয়ারেন্টাইন এক্সপেন্সিভ’ বা ‘সঙ্গনিরোধ ব্যয়’ খাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে বরাদ্দ দিয়েছিলো তা সঠিকভাবে খরচ হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে এর চেয়ে বেশী খরচ না হওয়ায় তা মন্ত্রণালয়ে ফেরত গেছে। বরাদ্দগুলো সরাসরি জেলার সকল উপজেলা কমপ্লেক্সে সরাসরি যাওয়ায় এখানে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তেমন কোন কাজ করার সুযোগ ছিলো না। তাছাড়া সরকারি বরাদ্দের এক খাতের টাকা ভিন্ন খাতে খরচ করার এখতিয়ার আমাদের নেই।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বরাদ্দ এসেছিল ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৮৪৮ টাকা, এর মধ্যে ফেরত গেছে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ২০৫ টাকা, রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ এসেছিল ১৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬০ টাকা, ফেরত গেছে ১৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৮০ টাকা, কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ এসেছিল ২৫ লাখ ১২ হাজার ৯৬০ টাকা, ফেরত গেছে ২০ লাখ ২৩ হাজার ২৯৫ টাকা, জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ এসেছিল ১৫ লাখ ৯১ হাজার ২৪০ টাকা, ফেরত গেছে ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৭শ টাকা, বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ এসেছিল ২১ লাখ ১৭ হাজার ৬৮০ টাকা, ফেরত গেছে ১৭ লাখ ২ হাজার ৯৭৫ টাকা, কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ এসেছিল ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫২০ টাকা, ফেরত গেছে ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬শ টাকা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বরাদ্দ এসেছিল ১৯ লাখ ৫০ হাজার ৫২০ টাকা, ফেরত গেছে ১২ লাখ ৩৯ হাজার ২০৪ টাকা।
তবে, মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে ৭৬ লাখ ৯১ হাজার ২শ এবং সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ লাখ ২১ হাজার ৬০ টাকা বরাদ্দ আসলে পুরোটাই ব্যয় করা হয়।
এ বিষয়ে রাজনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বর্ণালী দাশ জানান, প্রশিক্ষণ, টিকা প্রদান ও নমুনা সংগ্রহ বাবদ আমার উপজেলায় টাকা খরচ করা হয়েছে।
জুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সমরজিৎ সিংহ জানান, গত অর্থবছরে কয়েকজন ছুটিতে ছিলেন, আবার লোকবলও কম ছিল। যার কারণে পুরো টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়নি।
তবে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফেরদৌস আক্তার বলেন, কুলাউড়া হাসপাতালে করোনা রোগীদের পরিচর্যা করার জন্য উন্নত আইসিইউ কিংবা সিসিইউ বেড নেই। তাই জরুরী রোগীদের বেশীরভাগ জেলা সদর হাসপাতাল অথবা সিলেটে প্রেরণ করা হয়। আর যারা আক্রান্ত হয় তাদের বেশীরভাগ বাসায় হোম আইসোলেশনে চিকিৎসা নেন। তাই এই খাতে খরচের পরিমান এমনিতেই কম হয়েছে। অন্যখাতে খরচ করার সুযোগ ছিলো না।
সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, সুনির্দিষ্ট ব্যয়ের কোনো পরিকল্পনা দেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব টাকা খরচ করা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে টাকা সরাসরি সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পাঠানো হয়। যার কারণে ব্যয়ের বিষয়ে আমাদের কোনো এখতিয়ার ছিল না। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার হিসাব মন্ত্রণালয়কে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। মৌলভীবাজারে করোনা রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা ইতিমধ্যে ‘অক্সিজেন প্ল্যান্ট’ করার উদ্যোগ নিয়েছি। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে তা বাস্তবায়ন হবে আশা করছি।