জাতিসংঘে ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী ॥ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় পদক্ষেপ চাই

2

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ পরবর্তী টেকসই এবং স্থিতিস্থাপক বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য পানি সম্পর্কিত বিপর্যয় নিরসনে শক্তিশালী অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বাংলাদেশ বন্যা, পানি সঙ্কট ও লবণাক্ততা সমস্যায় ভুগছে জানিয়ে তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও পানি নিরাপত্তার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে ফলভিত্তিক ও সমন্বিত ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানান।
শুক্রবার সন্ধ্যায় পানি ও দুর্যোগ বিষয়ে ‘বিল্ডিং ব্যাক বেটার টুওয়ার্ডস মোর রেলিজেন্স এ্যান্ড সাসটেনেবল পোস- কোভিড-১৯ ওয়াল্ড’ শীর্ষক জাতিসংঘের পঞ্চম থিমেটিক ভার্চুয়াল অধিবেশনে দেয়া ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, পরিষ্কার সুপেয় পানির ক্রমবর্ধমান ঘাটতি, কলেরা, টাইফয়েড ইত্যাদির মতো রোগের প্রাদুর্ভাব আমাদের শান্তি ও বিকাশের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়। পানি-সংক্রান্ত ব্যাধি নিরসনে আমাদের আরও শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সৃষ্টি করার একটি সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দেন যে, বিশ্ব এখন কোভিড-১৯ এর জন্য আমাদের সময়ে সবচেয়ে ব্যাপক স্বাস্থ্য সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা প্রচুর অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিঘ্নের সৃষ্টি করছে এবং এর ফলে আমাদের টেকসই উন্নয়নের গতি হ্রাস পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে আমরা আমাদের সময়ে সবচেয়ে বেশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সঙ্কটের মুখোমুখি। মহামারীর কারণে ব্যাপক অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির কারণে টেকসই উন্নয়ন অগ্রগতি কমে গেছে। পানি সম্পর্কিত দুর্যোগ প্রশমনে শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সৃষ্টি করতে আমাদের একটা দায়-দায়িত্ব রয়েছে।
পানি নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা- এ তিনটি শক্তিশালী নদীর মোহনা অবস্থিত বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে নিচু নদী তীরবর্তী দেশ। বর্তমানে বাংলাদেশ পানি বিষয়ে দুটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার মুখোমুখি- পানির ঘাটতি এবং অধিক পানি প্রবাহ (বন্যা)। বর্ষায় ৯০ শতাংশ পানি সীমান্ত পেরিয়ে আমাদের লোকালয়গুলো প্লাবিত করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আর শুষ্ক মৌসুমে সারাদেশে খরার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করে। তারপর সমুদ্রের লবণাক্ত পানি উজানের দিকে ওঠে আসায় উপকূলে নিরাপদ সুপেয় পানির অভাব নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে পানি-সম্পর্কিত বিপর্যয় মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিবেচনার জন্য পাঁচটি প্রস্তাবও উত্থাপন করেন। তিনি তার প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলেন, বিশ্বকে নিরাপদ পানির জন্য সমন্বিত, ফলদায়ক, মনোযোগী এবং অভিযোজিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টা এবং বিশেষ করে ভাল অনুশীলন, জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশের সরকারপ্রধান তার তৃতীয় প্রস্তাবে বলেন, পানি ব্যবস্থাপনা, পানি নীতি এবং উপরের ও নিম্ন অববাহিকার দেশগুলোর মধ্যে পানি ব্যবহারের বিষয়টি সমন্বয় হওয়া উচিত। চতুর্থ প্রস্তাবে তিনি বলেন, আমাদের সেনডাই ফ্রেমওয়ার্ক, এসডিজি ও প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে মনোযোগী হওয়া উচিত। সর্বশেষ পঞ্চম সুপারিশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি পাওয়া নিশ্চিত করতে অর্থায়ন প্রয়োজন।
পানিসংক্রান্ত বিপর্যয় সমাধানে রাজনৈতিক ইচ্ছা ও সম্পদকে সংগঠিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সরকার ও অংশীদারদের সহায়তা করার জন্য প্রতিষ্ঠিত পানি ও দুর্যোগ সম্পর্কিত উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও নেতৃত্ব প্যানেল (এইচইএলপি) এই অধিবেশনটির আয়োজন করেছে।
এই বছরের অধিবেশনটি ‘আরও বেশি স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই কোভিড -১৯ পরবর্তী বিশে^র দিকে এগিয়ে যাওয়ার’ শীর্ষক শিরোনামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যাতে পানি এবং বিপর্যয় (এইচইএলপি) বিষয়ে হাঙ্গেরি, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ড, রিপাবলিক অব কোরিয়া, তাজিকিস্তান এর উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ এবং নেতৃবৃন্দ অংশ নিচ্ছেন এবং জাপানের ন্যাশনাল গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ (জিআরআইপিএস) এর সহ আয়োজক।