কাজিরবাজার ডেস্ক :
ঘুষ গ্রহণ ও অর্থপাচার আইনের মামলায় বরখাস্তকৃত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) পার্থ গোপাল বণিকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, গত বুধবার ২৩ জুন আদালতে দুদকের পক্ষে বিশেষ পিপি মোশারফ হোসেন কাজল পার্থের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। গত ১৭ জুন পার্থের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক আগামী ১৫ জুলাই পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
গত বছরের ৪ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ-১০-এর বিচারক নজরুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। তারও আগে ৩১ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েস দুদকের দেয়া চার্জশিট গ্রহণ করেন। একইসঙ্গে চার্জ গঠন শুনানির জন্য মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ-১০ আদালতে বদলি করেন। ২৪ আগষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন এ চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৯ সালের ২৯ জুলাই দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ পার্থ গোপাল বণিককে আসামি করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, বরখাস্ত কারা উপ-মহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিক সরকারি চাকরিতে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেন। এসব টাকা গোপন করে তার নামীয় কোনো ব্যাংক হিসাবে জমা না রেখে বিদেশে পাচারের উদ্দেশে নিজ বাসস্থানে লুকিয়ে রেখে দন্ডবিধির ১৬১ ধারা, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই দুদকের সেগুনবাগিচার প্রধান কার্যালয়ে পার্থ গোপাল বণিককে দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফের নেতৃত্বে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একইদিন বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডির ভুতেরগলিতে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করে দুদক। পরে এই ঘটনায় কলাবাগান থানায় পার্থের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।
জানা যায়, সিলেটে দায়িত্ব পালনের আগে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্ব পালন করেন পার্থ গোপাল বণিক। চট্টগ্রাম কারাগারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তাকে এবং চট্টগ্রামের সাবেক সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। তারপরই অভিযানে নামে সংস্থাটি। পরে ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পার্থ গোপাল বণিককে গ্রেফতারের দিন থেকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে। টাকা জব্দের পর অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া দুদক পরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ বলেছিলেন, ‘তার ঘোষিত আয়কর ফাইলে এ টাকার ঘোষণা নেই। আমাদের মনে হয়েছে, এই টাকা অবৈধ আয় থেকে অর্জিত।’ তবে সাবেক ডিআইজি পার্থ দাবি করেছেন, ওই ৮০ লাখ টাকা তার বৈধ আয় থেকে অর্জিত। এর মধ্যে ৩০ লাখ টাকা শাশুড়ি তাকে দিয়েছেন। আর বাকি ৫০ লাখ টাকা তার সারাজীবনের জমানো।