সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ॥ চালিবন্দরে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমি হারানোর শঙ্কায় প্রবাসীরা

25

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট নগরীর কাস্টঘর চালিবন্দর এলাকায় ক্রয়কৃত কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা। তাদের অভিযোগ, সাবেক সিটি কাউন্সিলর দিবা রাণী দে বাবলীর স্বামী মনীন্দ্র চন্দ্রের নেতৃত্বে অ্যাডভোকেট মহানন্দ পাল, সুকেশ দাস, আবু সাইদ অভি ও হাবিবুর রহমান মজলাইসহ আরও কয়েকজন মিলে তাদের ৪ একর ভূমি আত্মসাৎ ও জবদরখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন।
বুধবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন দক্ষিণ সুরমার উপজেলার জৈনপুর এলাকার মরহুম আব্দুর রবের ছেলে লন্ডন প্রবাসী মো. গোলাম কিবরিয়া হিরা মিয়া। সংবাদ সম্মেলনে এ চক্রের কারণে ভূমি হারানোর পাশাপাশি প্রাণনাশের শঙ্কায়ও আছেন বলে জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলেন লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কাষ্টঘরে তিনি এবং ফয়সল আহমদ নামে আরও এক প্রবাসীর ক্রয়কৃত ১ দশমিক ১২ একর জমি রয়েছে। ২০০১ সালে তারা এ ভূমি ক্রয় করেন। এ জমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। কিন্তু মনিন্দ্র রঞ্জন দের কারণে তারা ভূমি মালিকানা হারানোর পাশাপাশি প্রাণনাশের শঙ্কায় আছেন। শুধু তাদের এ জমিই নয়, মনিন্দ্রের নেতৃত্বে তার সহযোগীরাও সেখানকরা প্রায় ৪ একর ভূমি আত্মসাৎ ও জবরদখলের চেষ্টায় লিপ্ত আছেন বলেও তিনি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘মনিন্দ্র রঞ্জন দে ভূমি জবরদখলের লক্ষ্যে ১৯৭৮ সালের একটি মামলার রায়ের কপি জাল-জালিয়াতি করে ২০১৬ সালে সিলেট সাব জজ দ্বিতীয় আদালতে তিনিসহ ৯৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ভট্টাচার্য্য চৌধুরী নামের জনৈক ব্যক্তিকে বাদি করলে পরবর্তীতে আদালতে এসে সেই ব্যক্তি ওই মামলার বাদি ছিলেন না এবং ওই মামলার বিষয়ে কাউকে কোনো আমতোক্তারনামাও দেননি বলে স্বীকারোক্তি দেন এবং তার প্রকৃত নাম কাজল ভট্টাচার্য্য বলে জানান। সবকিছু মনিন্দ্র রঞ্জন দে’র প্রতারণা বলেও তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন। মনিন্দ্র রঞ্জন এ মামলার ক্ষেত্রে আদালতের রেকর্ডীয় ৫০/১৯৭৮ ইংরেজি এর একটি মামলার কাগজপত্র জাল করে এই মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘মনিন্দ্র রঞ্জন দে একজন প্রমাণিত জালিয়াত ও ভূমিখেকো। তার বিরুদ্ধে দেওয়ানি ও ফৌজদারি একাধিক মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে জাল টাকা ও পাসপোর্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মর্মেও মামলা হয়। পাশাপাশি ২০১১ সালে স্থানীয় এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে ৬৩ পৃষ্টার একটি অভিযোগও দাখিল করেছিল। এর সত্যতা পেয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিও লেটার দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও তাদের দৌরাত্ম্য থামেনি এবং স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও জেল থেকে বেরিয়ে বারবার একই অপকর্মে লিপ্ত হন তারা।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এসব অভিযোগ ছাড়াও মনিন্দ্র ২০০৭ সালে নিজেকে ভূমি ও গৃহহীন দাবি করে জেলা প্রশাসক বরাবরে তাকে অর্পিত সম্পত্তি বন্দোবস্ত দেয়ার দরখাস্ত করেন। মূল বিষয় হচ্ছে- মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তিনি অর্পিত সম্পত্তি অবৈধভাবে ভোগদখলের পাঁয়তার করছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি ছড়ারপাড় এলাকার হাবিবুর রহমান মজলাইর বিরুদ্ধেও তার ভূ-সম্পত্তিতে জোরপূর্বক মাটিভরাট ও মসজিদের সাইনবোর্ড স্থাপন করে মোটা অংকের চাঁদা দাবির অভিযোগ করেছেন। চাঁদা প্রদানে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তাদের গালিগালাজসহ হামলা-মামলার হুমকিও দেয়া হচ্ছে। এ কারণে ওই ভূমির প্রকৃত মালিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি এও জানান, এর আগে সর্বপ্রথম এই ভূমি আত্মসাতের লক্ষ্যে মাওলানা রেজাউল করিম কাসেমী ও তার সহযোগীরা ‘মাদানী বিল্ডকম প্রাইভেট লিমিটেড’ নামক একটি কোম্পানি তৈরি করে জাল দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করেন। পরবর্তীতে আদালত তাদের দোষী সাব্যস্ত করলে বর্তমানে তারা পলাতক রয়েছেন।’ তিনি সংবাদ সম্মেলনে প্রভাবশালী ভূমিখেকো চক্রের হাত থেকে নিরীহ প্রবাসীদের বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।