বাবা হারানো স্মৃতি আজো ভুলতে পারিনি

8

মো. আলম হোসেন :

আস্থা, ভরসা আর পরম নির্ভরতার নাম বাবা। বাবা এমন এক বৃক্ষ, যে বৃক্ষের ছায়ায় আস্থার খোরাকে বেঁচে থাকার শক্তি পায় সন্তান। প্রতিটি সন্তানের কাছেই বাবা মানে শক্তি আর সাহস। বাবার প্রতি সন্তানের চিরন্তন ভালোবাসার প্রকাশ প্রতিদিনই ঘটে। এই ভালোবাসা বিশেষ কোন একদিনের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে না। বাবা-মার জন্য ভালোবাসা প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ। যদিও বাবা-মার জন্য বিশেষ দিন হিসেবে প্রতি বছর নির্দিষ্ট করে একটি দিন পালিত হয়ে আসছে। আসলে বাবা-মার জন্য ভালোবাসার কোন নির্দিষ্ট দিন নেই। সন্তানের জন্য প্রতিদিন বাবা দিবস এবং প্রতিদিনই মা দিবস।বাবা মানে একটু শাসন, অনেক ভালোবাসা। প্রতিটি মানুষের জীবনে বাবা ছাদ হয়ে থাকেন।
কাল বৈশাখী ঝড়ে হঠাৎ ভেঙে যাওয়া বটবৃক্ষের মতো হয়তো কারো কারো জীবনে বাবা নামক বৃক্ষটি হারিয়ে যায়।তখন বটবৃক্ষের নিচে থাকা গাছগুলোর মতো বাবা হারা সন্তাদের সমস্ত ঝড় বৃষ্টি রোদ মোকাবেলা করে পৃথিবীতে টিকে থাকতে হয়।অনেকে হয়তো ঝড়ের তান্ডবে জীবন থেকেই হারিয়ে যায়।…….
বাবা’ একটি শব্দ ও দু’টি বর্ণের হৃদয়ের স্পন্দন। বাবাকে নিয়ে যত কথা, যত স্মৃতি সেটি কয়েক কোটি শব্দ দিয়েও পূরণ করার নয়।আমার বাবা ১৯৮৮ সালের ২২ এপ্রিল ৯ই বৈশাখ ৫ই রমজান দিবাগত রাতরে তারাবি নামাজে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে কাঁদিয়ে গেলেন আমাদের। দেখতে দেখতে ৩৩টি বছর চলে গেল। কিন্তু আজও বাবার স্মৃতিগুলোকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। বাকি জীবনের জন্য খুঁজে পাচ্ছি আত্মবিশ্বাস।
আমি গর্ব করি আমার বাবাকে নিয়ে। আমার বাবা মরহুম সোনাহর আলী কাঁচা মিয়া ছিলেন একজন সৎ, প্রজ্ঞাবান ও বিচক্ষণ ব্যক্তি। অল্প সময়েই তার নাম – ডাক সুনাম বিশ্বনাথ সহ সিলেটের ব্যপক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এক সময় তিনি বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের একজন জনপ্রিয় ইউপি সদস্য হয়ে ওঠেন। তিনি পালের চক গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।যে কারণে তাকে অনেকে কাঁচা মেম্বার নামে বেশি স্বরণ করে থাকেন।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে উনার বলিষ্ঠ ভূমিকা সবসময় মানুষের প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। এখনো তার সহযোদ্ধারা তাকে নিয়ে গল্প করে, একজন সন্তান হিসেবে এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না।আমার কাছে আমার বাবা পুরো পৃথিবীর সেরা বাবা। কোনো দিবসে নয়, যতদিন বেঁচে আছি বাবাকে নিয়ে আমার প্রতিটিক্ষণ মধুময় হয়ে থাকবে। ‘বাবা আমি তোমাকে ভালোবাসি’- এই কথাটি কোনোদিন বলা হয় নি। বাবা, সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আর মিস করি প্রতিনিয়ত। আমি একজন সৎ সাহসী ও বিপ্লবী মানুষের সন্তান, যার পরিচয় দিতে গর্বে বুকটা ভরে উঠে। আমার বয়স যখন সাত বছর তখন বাবা কে হারালাম বড় হয়ে যখন সমাজে চলাফেরা করি মাথার উপর বাবার ছায়া কি জিনিস হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারি। বাবা হারানো স্মৃতি আজো ভুলতে পারিনি। আমার বাবাকে নিয়ে অনেক কিছু লেখার আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার ভেতরের কান্না থামাতে পারছি না। বাবার স্মৃতিগুলো বড় কাতর করে রাখছে। পিতৃবিয়োগের কষ্ট এভাবে আমাকে আচ্ছন্ন করবে তা ভাবিনি। বাবা সবসময় আমাদের নিয়ে গর্ব করতেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করেন আমিন।

লেখক : বেলজিয়াম প্রবাসী।