কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত আধুনিকায়ন ও অপরাধের ধরন পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে বলেছেন, বিজ্ঞান ও আধুনিকতা যেমন আমাদের সুযোগ দিচ্ছে, তেমনি জীবনের ঝুঁকিরও সৃষ্টি করছে। আমার সব সময় চেষ্টা ছিল এই আধুনিক জগতের সঙ্গে তালমিলিয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) প্রশিক্ষিত হবে এবং দক্ষতা সব সময় বৃদ্ধি পাবে। সেজন্য এই বিশেষ বাহিনীর জন্য দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ নানা রকম সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।
মঙ্গলবার স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স-এসএসএফের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে (ভার্চুয়াল) প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এসএসএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করছি। তাতে জীবন গতিশীল হচ্ছে, কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে, আমাদের সুযোগ দিচ্ছে। একইসঙ্গে অপরাধীরাও সুযোগ পাচ্ছে, জঙ্গিরাও সুযোগ পাচ্ছে। একেক সময় একেক ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের উৎপত্তি আসে এবং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের ধরনটাও পাল্টায়। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেমন আমরা আধুনিক জীবনমান উন্নত করতে পারি, আবার অপরাধীরাও যারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত তারাও কিন্তু এই প্রযুক্তিই ব্যবহার করে নতুনভাবে অপরাধ করে। কাজেই আমার সবসময় চেষ্টা ছিল এই আধুনিক জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার।
এসএসএফ’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা এবং অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পিএমও সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সরকার প্রধান বলেন, আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা তাদের পরিবারবর্গই নয়, বিদেশী অতিথিরা আসলে তাদের নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে এসএসএফ’র একটা বিরাট ভূমিকা থাকে। আর এটা একটা কঠিন দায়িত্ব। এসএসএফ’র সদস্যদের সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিদেশ থেকে যিনি যখনই এসেছেন, আমাদের এসএসএফ সদস্যরা এত চমৎকারভাবে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন যার প্রশংসা প্রত্যেকেই প্রায় করেছেন। সকলেই এসএসএফ সদস্যদের দক্ষতা ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছেন। যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সফলতার পেছনেও এই এসএসএফ সদস্যদের অনেক অবদান রয়েছে। একদিকে যখন করোনা অন্যদিকে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভূটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে প্রটোকল এবং নিরাপত্তা দেয়া চ্যালেঞ্জিং ছিল। যাতে তারা সফল হয়েছেন। এজন্য এসএসএফ’র সকল সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ সময় তার দল, সশস্ত্রবাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের অবদানের কথাও প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করে বলেন, সকলের সহযোগিতার জন্যই এটা আমরা করতে পেরেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে যখন তিনি প্রথম সরকার গঠন করেন তখন থেকেই দেখেছেন এই স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। যদিও দায়িত্ব পালনকালে তাদের নানাবিধ সমস্যা ছিল। যেহেতু বিভিন্ন বাহিনীর থেকে এখানে সদস্যরা আসেন, তাদের যেমন আবাসন সমস্যা ছিল তেমনি প্রশিক্ষণের এমনকি ফায়ারিং এর জন্য আলাদা কোন জায়গা ছিল না। যার সমাধান তার সরকার করেছে।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে সদ্য স্বাধীন দেশে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতার উদ্যোগ এবং ’৭৫ পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন। সাবেক সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ’৭৫ এর পর যে সেনা সদস্য ক্ষমতায় এসেছিল, সে ইনডেমনিটি দিয়ে জাতির পিতার বিচারের পথ রুদ্ধ করে, খুনীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। এমনকি কারাগারে থাকা ১১ হাজার সাজাপ্রাপ্ত এবং ২২ হাজার বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীকে মুক্তি দিয়ে দেয়। এমনই এক পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর এক রকম জোর করেই দেশে ফিরে আসেন একটা স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য। যে স্বপ্নটা দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানতাম যারা আমার বাবা-মা এমনকি ছোট্ট ১০ বছরের শিশু ভাইটিকে পর্যন্ত হত্যা করেছে সেই ঘাতকের আঘাত সব সময় আমার জন্য প্রস্তুত। তারপরেও আমি ফিরে এসেছিলাম যার একটাই লক্ষ্য ছিল যে, এই বাংলাদেশে সরকার গঠন করে দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে। স্বাধীনতার চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে হবে, জাতির পিতার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেইসঙ্গে ঘাতকদের বিচার করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনডেমনিটি’র কারণে তিনি যেমন হত্যা মামলা করতে পারেননি তেমনি জিডিও করা সম্ভব হয়নি। এমনকি হত্যাকাণ্ডের শিকার তাদের পরিবারের অন্য কাউকেও মামলা করতে দেয়া হয়নি। ওই পরিস্থিতিতে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। কারণ জনগণই ছিল আমার একমাত্র শক্তি। আর ছিল আমার দল আওয়ামী লীগ। অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে ২১ বছর পর আমরা সরকার গঠন করি।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের পক্ষ থেকে ১০০টি গৃহহীন পরিবারের জন্য ২ কোটি টাকার একটি ব্যাংক ড্রাফট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন এসএসএফ’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ মজিবুর রহমান। মুজিববর্ষে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মারক হিসেবে এসএসএফ এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ মজিবুর রহমান সম্পাদিত ‘মুজিব-বাঙালী-বাংলাদেশ’ নামে একটি ই-বুক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং সরকার ঘোষিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তার জন্য ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপতি নিরাপত্তা বাহিনী গঠিত হয়। পরবর্তীতে এই বাহিনীকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স হিসেবে নতুন নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশ সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ ও আনসার বাহিনী প্রেষণে নিযুক্ত অফিসারদের নিয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স গঠিত।