আল-হেলাল সুনামগঞ্জ থেকে :
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরসভার আলোচিত ফুটবলার মাসুম হত্যাকান্ডের ঘটনায় ঐ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাফরোজ ইসলাম মুন্নাকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করাসহ সকল আসামীদের গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে।
সোমবার সকালে নিহত মাসুমের পরিবার ও স্বজনদের আয়োজনে সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন শিল্পকলা একাডেমির আব্দুল হাই মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহতের আপন ছোটবোন হত্যা মামলার বাদি তমা আক্তার।
তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, জগন্নাথপুর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের পূর্ব ভবানীপুরে আমার শ্বশুর বাড়ির নিজস্ব উঠান দিয়ে পাশের বাড়ির সুরুজ আলী ও তার ছেলেরা জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করার জন্য প্রায় সময়ই হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলো। তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে বর্তমান পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাফরোজ ইসলাম মুন্নার। আমার ভাই ফুটবলার মাসুম ছোটবেলা থেকেই আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে বড় হয়েছেন। গত ১৬ এপ্রিল কাউন্সিলর সাফরোজ ইসলাম মুন্না বেলা আড়াইটায় আমাদের বাড়িতে এসে আমার ভাই মাসুমকে ঘুম থেকে ডেকে উঠানে নিয়ে বাঁশের বেড়া তুলে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিলে মাসুম তা প্রত্যাখ্যান করেন। এ সময় কাউন্সিলর সাফরোজ ইসলাম মুন্নার সামনে প্রতিপক্ষ সুরুজ আলী, তার ছেলে রুবেল মিয়া ও নাজমুল হক লিয়নের নেতৃত্বে ১৫/২০ জন লোক লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রথমে আমার ভাই মাসুমের মাথায় আঘাত করে এবং পরে শরীরের বিভিন্ন অংশে পিঠানোর ফলে সে সংজ্ঞাহীন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আমার মা বার বার আমার ভাইকে বাঁচানোর জন্য কাউন্সিলরের নিকট হাতজোড় করে প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও তিনি কোন কর্তপাত করেননি। বরং কাউন্সিলর সাফরোজ ইসলাম মুন্না এ সময় উঠানে দেয়া বাশেঁর বেড়া উপড়ে ফেলেন। তাৎক্ষণিক আমরা মাসুমের অবস্থা গুরুতর দেখে প্রথমে তাকে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রে নিয়ে গেলে তার অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। ঐদিন তাকে সিলেট ওসমানীতে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক তিনবারের কাউন্সিলর আবাব মিয়া কাউন্সিলর থাকাকালীন অবস্থায় আমাদের উঠানের উপর দিয়ে রাস্তাটি নির্মাণের কথা কোনদিন বলেননি। কারণে প্রতিপক্ষ সুরুজ আলী গংদের বাড়ি থেকে একটি বিকল্প পাকা রাস্তা থাকায় তিনি কোনদিন কোনপক্ষের সাথে এ বিষয়ে কোন আলোচনাই করেননি। বর্তমান কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েই আমাদের নিজস্ব উঠানের উপর দিয়ে প্রতিপক্ষ সুরুজ আলী গংদের জন্য আমাদের বাশেঁর বেড়া তুলে রাস্তা নির্মাণ করে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। আমার ভাই ফুটবলার মাসুমকে পরিকল্পিতভাবে কাউন্সিলর সাফরোজ ইসলাম মুন্নার নেতৃত্বেই হত্যা করা হয়েছে। আমার ভাই মারা যাওয়ার পর থেকে কাউন্সিলর সাফরোজ ইসলাম তাকে যেন মামলায় আসামী করা না হয় সেজন্য তিনি বিভিন্নভাবে আমাদেরকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তাই জীবনের ভয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১০ জনের নাম উল্লেখ করে গত ১৯ এপ্রিল ২০২১ইং তারিখে জগন্নাথপুর থানায় আমি বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। যার মামলা নম্বর-০৯ তাং ১৯/০৪/২০২১ইং। তবে মামলায় কাউন্সিলর সাফরোজকে অজ্ঞাতনামা আসামীর মধ্যে রাখা হলে বর্তমানে তিনি সরকার দলীয় লেবাসে বিভিন্ন জায়গাতে অপপ্রচারসহ বিভিন্নভাবে আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এই মামলায় তাকে আসামী হিসেবে আটক ও অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা সরকার ও আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট দাবি জানাই। এই মামলায় এ যাবত ৪জন আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করলেও ১জন আসামী কিছুদিন আগে জামিনে মুক্তিলাভ করে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমাদেরকে হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জগন্নাথপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা মো. সুহেল আহমদ, নিহতের মামা মো. আলী আহমদ, যুবলীগ নেতা সাবুল মিয়া, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুল পরান, নিহত মাসুমের আপন চাচাতো ভাই আব্দুল লতিফ, সিজিল মিয়া, ফুফাতো ভাই আব্দুল বারিক,সালিশ ব্যক্তিত্ব মো. মানিক মিয়া তালুকদার ও সমাজসেবক রেজাউল করিম রাজু প্রমুখ।