স্টাফ রিপোর্টার :
প্রতিবছর শাহজালাল (রহ.) মাজারে ওরসের আগে লাকড়ি তোরা উৎসব পালন করা হয়। প্রতিবছরই এতে অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী অংশ নেন। মাজার থেকে দীর্ঘ মিছিল নিয়ে যাওয়া হয় লাক্কাতুরা বাগানে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে গতবারের ন্যায় এবারও স্বল্প পরিসরে কেবল রেওয়াজ রক্ষার জন্য এ উৎসব পালন করা হলো।
গতকাল মঙ্গলবার লাকড়ি তোড়া উৎসব পালন করা হয়। এবার হযরত শাহজালাল (রহ.) এর দরগাহে ৭০২ তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে লৌকিক উৎসব ‘লাকড়ি তোরা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এবারের ওরসও করোনা পরিস্থিতির কারণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার শরীফের খাদেম সামন মাহমুদ খান।
তিনি জানান, গতকাল শাহজালাল মাজার শরীফের ওরস উপলক্ষে লাকড়ি তোরা উৎসব পালিত হয়েছে। তবে গত বছরের মতো এবারও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার শরীফের ওরস অনুষ্ঠান নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আগামি শনিবার ১২ জুন সাংবাদিকদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভার মাধ্যমে লিখিত আকারে জানানো হবে।
জানা যায়, শাহজালাল (রহ.) এর জীবদ্দশায় এভাবে লাকড়ি সংগ্রহ করে রান্না করা হতো। সেই ঐতিহ্য রক্ষা করে ৭০০ বছর ধরে ওরসের তিন সপ্তাহ আগে লাকড়ি তোড়া সম্পন্ন হয়ে আসছে। এসব সংগ্রহ করা লাকড়ি নির্দিষ্ট স্থানে জমা করে রাখা হয়। আর এসব লাকড়ি দিয়েই ওরসে শিরনির রান্না করা হয়ে থাকে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় ৭০০ বছর আগে সিলেট বিজয় দিবসের কয়েক দিন ২৬ শাওয়ালের এই দিনের আগে এক কাঠুরে আসেন হযরত শাহজালাল (রহ.) এর কাছে। কাঠুরে জানান-ঘরে তার বিবাহযোগ্য ৫ মেয়ে রয়েছে। সে কাঠুরে নিচু জাতের হওয়ায় কেউই তার মেয়েদের বিয়ে করতে চাইছে না। এ কথা শুনে শাহজালাল (রহ.) কাঠুরেকে সিলেট বিজয় দিবসে দরগায় আসার কথা বলেন।
পরবর্তী সিলেট বিজয় দিবসে সঙ্গী আউলিয়া,ভক্ত ও আশেকানরা আসলে শাহজালাল (রহ.) সবাইকে নিয়ে লাক্কাতুড়া বাগানে গিয়ে কাঠ সংগ্রহ করেন। ফিরে এসে তিনি উপস্থিত ভক্তদের কাছে জানতে চান তারা আজ কি কাজ করেছে। উত্তরে সবাই বলেন তারা আজ কাঠুরিয়ার কাজ করেছে।
এরপর শাহজালাল সবাইকে কাঠুরের দুঃখের কথা বললে উপস্থিত অনেক ভক্ত কাঠুরের মেয়েদের বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেখান থেকে কাঠুরে তার মেয়েদের জন্য বর পছন্দ করেন। এ ঘটনার পর থেকে সাম্য ও শ্রেণী বৈষম্য বিরোধী দিবস হিসেবেও দিনটি পালন করেন ভক্তরা।